আইও’র তদন্তে অসন্তুষ্ট বাদী, তদন্তভার পিবিআইতে

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরীর ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ফাহিমা আজাদ বিথীর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে খুলশী থানায় দায়ের হওয়া একটি অপমৃত্যু মামলার (১২ (০৩) ২০২৫) তদন্ত নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার উপর সন্তুষ্ট নন বাদী। এমন অবস্থায় সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মামলাটি পিবিআই’র কাছে হস্তান্তরে আদালতে আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালতের আদেশে থানা থেকে পিবিআইয়ে পাঠানো হয় মামলাটি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত না করায় তা পিবিআই’র কাছে হস্তান্তরের জন্য গত ৮ এপ্রিল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালতে আবেদন জানানো হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত গত ২১ এপ্রিল শুনানীর তারিখ ধার্য করেছিলেন। ওই দিন আদালতে মামলাটির শুনানীর পর তা পিবিআই’য়ের কাছে হস্তান্তরের আদেশ দেন।

মামলার বাদী ফাতেমা আক্তার রত্নার অভিযোগ থেকে জানা যায়, মামলার ভিকটিম তার মেয়ে ফাহিমা আজাদ বিথী চট্টগ্রামের ইষ্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মাহামুদ রাফি তার মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব করে। এতে রাজি না হলে রাফি তার মেয়ে বিথীকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার প্রস্তাবে রাজি করায়। সম্পর্ক গভীর হলে ও রাফির পড়ালেখা সম্পন্ন হয়ে গেলে বিথী তার প্রেমিক রাফিকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু রাফি বিয়েতে রাজি হয় না। উপরন্তু বিথীর সাথে খারাপ আচরণ শুরু করে এবং তাকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি রাফি তার প্রেমিকা বিথীকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করে।

চলতি বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি শাহরিয়ার মাহামুদ রাফি তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার থেকে বিথীর বড় বোনের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে ম্যাসেজে দিয়ে হুমকি দেয় যে, বিথীর লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৩ মার্চ রাত সোয়া ১২টার দিকে রাফির নাম্বার থেকে বিথীর বড় বোনের নাম্বারে ম্যাসেজ দিয়ে ফাহিমা আজাদ বিথীর খোঁজ নিতে বলে। এমন ম্যাসেজ পাওয়ার পর বিথীর বড়বোন বিথীর সাথে ফোনে যোগাযোগ শুরু করে। কিন্তু বিথী কল ধরে না। পরবর্তীতে বিথীর মা ফাতেমা আক্তার রত্মা (বাদী) চট্টগ্রামে অবস্থানরত তার বড়বোনকে ফোন করে এ ঘটনা জানান। বাদীর বড় বোন ও তার স্বামী এসে ওইদিন দুপুরে বিথীর ভাড়া বাসা দক্ষিণ খুলশী আবাসিক এলাকা এক নম্বর রোডস্থ রুকনুর স্প্রিংয়ের ফ্ল্যাট থেকে দরজা ভেঙ্গে বিথীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে খুলশী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঝুলন্ত অবস্থায় মৃত্যু মর্মে সনদ দেয়।

তবে আদালতে দাখিলকৃত আবেদনে বাদী পক্ষের অভিযোগ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মৃত ফাহিমা আজাদ বিথির শোয়ার ঘর থেকে তার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করলেও সেটি জব্দ না করে ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঘটনার ১৩ দিন পর গত ২৬ মার্চ বিথীর মোবাইল ফোনটি বন্ধ অবস্থায় তার মা ফাতেমা আক্তার রত্মাকে ফেরত দেয়। আবেদনে আরও অভিযোগ, তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল অর্থাৎ কথিত ফ্ল্যাটের সিসি টিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেননি এবং ভিকটিমের রুমমেটদের আটক বা জিজ্ঞাসাবাদও করেননি।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত-২০২০)’র ৯(ক) ধারা অনুযায়ী মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ভিকটিমের ফাঁস লাগানো অবস্থার ছবি, আলামত ও মামলার পারিপার্শ্বিক অবস্থার ছবি পর্যালোচনা সাপেক্ষে ধারণা করা যায়, মামলার ভিকটিম ফাহিমা আক্তার বিথিকে ধর্ষণ করে পরবর্তীতে হত্যা করা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ভিকটিমের সুরতহাল রিপোর্টে বীর্যের আলামত পাওয়া গেছে। তাছাড়া ভিকটিমের রুমের দরজা বাহির থেকে বন্ধ করারও সুযোগ রয়েছে। এমন অবস্থায় মামলার বাদীর আশংকা, বর্তমান তদন্তকারী কর্মকর্তার দ্বারা সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয়। তাই মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পিবিআই কর্তৃক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন মনে করে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালতে শুনানী শেষে তা পিবিআইকে হস্তান্তরের জন্য আদেশ দিয়েছেন। এটি একটি রহস্যজনক মামলা।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলশী থানার এসআই মো. জাকির হোসেন বলেন, মামলাটি শুরু থেকে আমি তদন্ত করেছি। বাদী পক্ষ তা পিবিআইয়ে হস্তান্তরের জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। আদালতের নির্দেশে সেটি আমি পিবিআইয়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top