নিজস্ব প্রতিবেদক : অবশেষে অস্থায়ী বাঁশ সরিয়ে ইটের দেয়াল নির্মিত হলো শিশু সেহেরীশের নিখোঁজ হওয়া হিজরা খালের সেই উন্মুক্ত অংশে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উদ্যোগে নগরীর অরক্ষিত খাল-নালায় নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ কার্যক্রমের আওতায় এই দেয়ালটি নির্মিত করা হয়েছে।
আজ শনিবার (৩ মে) সরেজমিনে নগরীর চকবাজার কাপাসগোলার সেই আলোচিত স্থানে গিয়ে ইটের তৈরী দেয়ালটি দেখা গেছে। পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝে দেখা গেছে স্বস্তি।
এর আগে উক্ত স্থানে গত ১৮ এপ্রিল বৃষ্টিস্নাত রাত সাড়ে ৮টার দিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চড়ে ছয় মাসের শিশু সেহরীশ মা ও দাদির কোলে বসে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিল। তাদের বহনকারী অটোরিকশাটি কাপাসগোলা সড়ক হয়ে নবাব হোটেলের পাশ দিয়ে গলির ভিতরে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হিজরা খালে পড়ে যায়। এসময় স্থানীয়রা সেহেরীশের মা আর দাদিকে টেনে তুলতে পারলেও স্রোতের টানে তলিয়ে যায় শিশু সেহেরীশ।
রাতভর ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা উদ্ধার প্রচেষ্টা চালালেও শিশু সেহরীশের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর নিজ বাড়ির নিকটবর্তী চাক্তাই খালে পাওয়া যায় নিখোঁজ সেহেরীশের নিথর মরদেহ। খালের মাঝখানে আবর্জনার ভাগাড়ে পুতুলের মতো চিৎ হয়ে থাকা সে ছবিটি আলোড়ন তুলেছিল দেশজুড়ে।
এ ঘটনার পরপরই টনক নড়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের। নগরীর অরক্ষিত খাল-নালায় নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ ও উন্মুক্ত ড্রেন-ম্যানহোলে স্ল্যাব বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। যে উদ্যোগের শুরুটা হয়েছে শিশু সেহেরীশের নিখোঁজ স্থানে ইটের গাঁথুনি দেয়ার মাধ্যমে।
উক্ত স্থানের বাসিন্দা রহিমা বেগম জানান, আমরা সেহেরীশের ঘটনার পর থেকে আতংকে থাকতাম। বাচ্চাদের ঘরে বেধে রাখতাম যেন খালপাড়ে না যায়। কিন্তু কতক্ষণ আর চোখে চোখে রাখতে পারি বলেন? এবার ইটের দেয়াল দেয়ায় কিছুটা নিরাপদবোধ করছি।
আরেক বাসিন্দা মো. এনাম হায়দার বলেন, এখানে আগে বাঁশের বেড়া দেয়া হয়েছিল। কিছুদিন আগে খালের কাজ করার জন্য সেটি তুলে ফেলা হয়। শিশু সেহরীশের মৃত্যুর পর থেকে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় ভয় লাগে। আবার খারাপও লাগে। সামান্য কারণে এতবড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। তবে শেষ পর্যন্ত খালের পাড়ে স্থায়ী ইটের দেয়াল তুলে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এটা আমাদের জন্য সুখবর।
জানা গেছে, নগরবাসীর কাছ থেকে তথ্য সহায়তা চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও ‘আমার চট্টগ্রাম’ নামে একটি অ্যাপস চালু করেছে চসিক। যেখানে নগরীর অরক্ষিত খাল-নালা ও ড্রেন ম্যানহোলের তালিকা প্রণয়ণে কাজ শুরু করে। গত ২৪ এপ্রিল তালিকাটি প্রকাশ করে তারা। তালিকায় ৫৬৩টি অরক্ষিত খাল-নালাসহ অনেকগুলো উন্মুক্ত ম্যানহোলের তথ্য প্রকাশ করা হয়।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে নগরীর অরক্ষিত খাল-নালায় অস্থায়ী বা স্থায়ী নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। তালিকা অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। হিজড়া খালের চকবাজার কাপাসাগোলা নবাব হোটেল পার্শ্ববর্তী অংশে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থায়ী নিরাপত্তা দেয়াল নির্মাণ করেছি। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতেও নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ করা হবে।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/জেএইচ