চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : অস্ত্র বেচাকেনার কয়েকটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পর অভিযুক্ত কনস্টেবল মো. রিয়াদকে হেফাজতে নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। শনিবার (১৫ মার্চ) তাকে নগরের কোতোয়ালি থানায় আনা হয়। এরপর থেকে সিএমপির একটি টিম তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
মো. রিয়াদ সবশেষ চাঁদপুর জেলা পুলিশে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি কক্সবাজার র্যাবে ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া কাঞ্চনায়।
গত ৩ মার্চ দিবাগত রাতে পার্শ্ববর্তী এওচিয়া ইউনিয়ন এলাকায় স্থানীয়দের পিটুনিতে নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক নামে দুজন নিহত হন। ওইসময় ভুক্তভোগী নেজামের মরদেহের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ওই অস্ত্রটি ঘটনার সময় কে ব্যবহার করেছেন সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে অস্ত্রটি কোতোয়ালি থানার বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। অত্যাধুনিক এ অস্ত্র উদ্ধারের পর সাতকানিয়ায় নেজামের পাঁচ সহযোগীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে পুলিশ।
এদিকে, কোতোয়ালি থানার অস্ত্র কীভাবে সাতকানিয়ায় গেল তা নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদের কয়েকটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। এসব অডিও ক্লিপে রিয়াদকে বলতে শোনা যায়, আসসালামু আলাইকুম, অ্যাঙ্কেল। এটি নিবেন। এটিতে ৩০ পিস গুলি দেওয়া যাবে। পার পিস ৩ হাজার টাকা করে দিতে হবে।
‘আপনাকে যেটি নিতে বলছি সেটি আর আমি যেটি ব্যবহার করছি (র্যাবে ব্যবহার করা পিস্তলের কথা বলছেন) সেইম। এটি আমি র্যাবে যখন গোয়েন্দা শাখায় ছিলাম তখন তুলেছি। আপনার কাছে যে অস্ত্র দিচ্ছি, সেটি আর এটি সেইম। এরকম অস্ত্র সব বাহিনীর কাছে আছে, সরকারি অস্ত্র। এই অস্ত্র সরস। বুঝছেন, আপনি না হলে আপনার বন্ধুদের জিজ্ঞেস করতে পারেন। এই অস্ত্রের গুলি সহজে পাওয়া যায়।’
অস্ত্রটির জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে জানিয়ে অডিওতে রিয়াদ আরও বলেন, এই অস্ত্রের গুলি প্রশাসনের সবার কাছে পাবেন। আমিও দিতে পারব। আমাদের বার্ষিক একটি ফায়ারিং হয়, ওইসময় ফায়ার না করে গুলি আপনার জন্য রেখে দেব। এ ছাড়া আমার অনেক লিংক আছে। ওদের মাধ্যমেও আপনাকে গুলির ব্যবস্থা করে দিতে পারব। আমি বেশি অনুরোধ করছি, কারণ আমার এই মুহূর্তে টাকার দরকার। ১০ হাজার টাকা আপনি আমাকে অতিরিক্ত দেবেন। সাড়ে ৫ লাখ টাকা বরাবর দিতে হবে। ২ লাখ ১০, ২ লাখ ২০ যেসব অস্ত্র ওই সব আমার কাছে নেই। সাড়ে ৫ লাখ টাকা তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
এসব অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। রিয়াদ অপর প্রান্তে কাকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলেছেন সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, সাতকানিয়া থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রটিই রিয়াদ বিক্রি করেছেন। তবে সেটিও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, পুলিশ কনস্টেবল রিয়াদ অস্ত্র ও গুলি বেচাকেনায় জড়িত এটি মোটামুটি নিশ্চিত। গত বছরের ৫ আগস্ট বিভিন্ন থানায় আক্রমণ করা হয়। এসময় পুলিশের অস্ত্র ও গুলি লুট করে দুর্বৃত্তরা। এ সুযোগে কিছু কিছু অসাধু কর্মকর্তা থানায় অস্ত্র জমা দেননি। পরে টাকার লোভে পড়ে কেউ কেউ সন্ত্রাসী চক্রের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে দেন।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশ দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার শাকিলা সোলতানা বলেন, অভিযুক্ত কনস্টেবলকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সাতকানিয়ায় যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে সেটি রিয়াদ বিক্রি করেছে– এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল করিম জানান, শনিবার রিয়াদকে হেফাজতে নিয়ে সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ