অস্ত্র জমা দেননি চট্টগ্রাম আ. লীগের দাপুটে নেতারা

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রামে অস্ত্র জমা দেননি আওয়ামী লীগের দাপুটে নেতারা। তাঁদের মধ্যে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনির নামও রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী আত্মগোপন করেন। নেতাদের মধ্যে অনেকে বিদেশে পালিয়ে গেছেন বলে খবর রয়েছে। এ কারণে অনেকের পক্ষে লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের কয়েকজন নেতা।

জানা গেছে, নানা সময়ে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে হামলা এবং আক্রমণাত্মক বক্তব্যের সমালোচিত ছিলেন চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। দলীয় বিবেচনায় প্রভাবশালী এই সংসদ সদস্য পেয়েছিলেন দুটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স। এর মধ্যে একটি ১ নলা বন্দুক এবং আরেকটি পিস্তল। সরকারের নির্দেশনা ছিল লাইসেন্স করা এই বন্দুক ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দুটি জমা দেননি তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মোস্তাফিজ আগেও লাইসেন্স করা বন্দুক দিয়ে জনসাধারণের মাঝে ভীতি ছড়িয়েছিলেন। বৈধ অস্ত্র বেশিরভাগ সময় ব্যবহার করেছেন অবৈধ কাজে। বর্তমানে যেকোনো সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে পারে এসব অস্ত্র। এ কারণে ভয়ের মধ্যে রয়েছেন বাঁশখালীর জনগণ। দ্রুত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দুটি উদ্ধার এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। যৌথবাহিনী তার এই অস্ত্র উদ্ধারে তৎপর রয়েছে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রামে আরেক দাপুটে সংসদ সদস্য ছিলেন আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী। চট্টগ্রাম-১৫ আসনের এই সংসদ সদস্যের নামেও ইস্যু রয়েছে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে একটি শটগান ও আরেকটি পিস্তল। একসময় জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত থাকলেও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন নদভী। নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কোনো সময় আইনের তোয়াক্কা করেননি। সরকারের পক্ষ থেকে লাইসেন্স বাতিল করে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানেননি তিনি।

অস্ত্র জমা না দেওয়ার তালিকায় রয়েছে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সাবেক সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনিও। তার নামে লাইসেন্স করা একটি পিস্তল থানায় জমা হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, নানা সময় মানবিক কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচিত চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ফারাজ করিম চৌধুরী। তিনি ওই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর ছেলে। নিরাপত্তা কথা বলে অস্ত্রের লাইসেন্স নিয়েছিলেন আলোচিত ফারাজ। তবে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর যথাসময়ে রাউজান থানায় অস্ত্র জমা দেননি তিনিও।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, নির্ধারিত সময়ে ফারাজ করিম চৌধুরীর অস্ত্র থানায় জমা দেওয়া হয়নি।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, মোস্তাফিজ, নদভী, সনি ও ফারাজ ছাড়াও বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট থানায় অস্ত্র জমা দেননি। এই তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীও তার নামে ইস্যু করা ১ নলা বন্দুক জমা দেননি।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে রয়েছেন দলটির প্রভাবশালী নেতারা। বন্ধ রয়েছে তাদের ব্যবহৃত সেলফোনও। তাই এ বিষয়ে তাদের মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) বিভিন্ন থানার অনুকূলে মোট ৪৫৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন থানায় জমা হয়েছে ৩৬১টি। বাকি ৯৩টি অস্ত্রের হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া জেলার বিভিন্ন থানার অনুকূলে ৩৮৮টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। এর মধ্যে ৩৩৫টি বিভিন্ন থানায় জমা হয়েছে। বাকি ৫৩টি অস্ত্রের হদিস মেলেনি।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন ও সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, বেশিরভাগ অস্ত্র নির্দিষ্ট সময়ে জমা হয়েছে। কিছু কিছু অস্ত্র যে থানার অনুকূলে ইস্যু হয়েছিল, সেখানে জমা হয়নি। অন্যান্য থানায় জমা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনও আমরা সংগ্রহ করছি। আর জমা না হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top