কক্সবাজার প্রতিনিধি :কক্সবাজার শহরে আবাসিক হোটেলে ‘প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে মেজবান আয়োজন’ পন্ড করেছে পুলিশ; এসময় অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক এবং ১৯ জন বিদেশি নাগরিকের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, রোহিঙ্গা দুই তরুণীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান দুই নাগরিকের বিয়ে উপলক্ষ্যে এই মেজবানের আয়োজন ছিল। যদিও পুলিশের সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
রোববার বিকাল ৫ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের লাইট হাউজ এলাকায় আবাসিক হোটেল সী পার্ল-২তে এ অভিযান চালানো হয় বলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
বর আব্দুল হামিদ (৩২) ও মোহাম্মদ ইলিয়াছ (২৪) মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বংশোদ্ভুদ অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। তাদের আত্মীয়-স্বজনরা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করে।
কনে খতিজা বেগম (১৬) ও হাসিনা আক্তার (১৭) উখিয়া উপজেলা বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। আটকদের মধ্যে ৬৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিক এবং ১৯ জন বিদেশি নাগরিক।
পুলিশ জানিয়েছে, বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে ১২ জন রোহিঙ্গা বংশোদ্ভুদ অস্ট্রেলিয়ান এবং ৭ জন আমেরিকান নাগরিক। এছাড়া বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে একজন জন্মসূত্রে অস্ট্রেলিয়ান।
রফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার বিকালে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনের লাইট হাউজ এলাকায় আবাসিক হোটেল সী পারেন-২তে প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিরেকে আশ্রয় শিবিরের বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা মেজবান উপলক্ষ্যে জড়ো হওয়ার খবর পায় পুলিশ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ১০০ জন রোহিঙ্গা ও বিদেশি নাগরিককে আটক করেছে। এসময় ১৯ বিদেশি নাগরিকের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় অনুষ্ঠান আয়োজনের নানা সামগ্রী এবং রান্না করা খাবারসহ নানা উপকরণ। অভিযানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হোটেলটির ম্যানেজারসহ কর্মচারীরা পালিয়ে গেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট জব্দ এবং আটক রোহিঙ্গাদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পের আটক রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান, রফিকুল ইসলাম।
হোটেলটির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা জয়নাল আবেদীন বলেন, বিদেশি ১৯ জন নাগরিক গত ১ মাস ধরে হোটেল অবস্থান করছেন। রোববার সকালে হোটেলে আসার পর দেখতে পান ওইসব রোহিঙ্গারা খাবারের আয়োজন করেছেন।
“ অনুষ্ঠানটি মেজবান নাকি বিয়ে এ ব্যাপারে আমি অবগত নই। অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে এসব রোহিঙ্গারা একটি বড় আকারের গরু ও একটি মহিষ জবাই করেছে। তবে বিভিন্ন জনের কাছে শুনেছি, রোহিঙ্গা দুই তরুণীর সঙ্গে বিদেশি রোহিঙ্গা বংশোদ্ভুদ দুই নাগরিকের বিয়ে উপলক্ষ্যে এই খাবার আয়োজন ছিল। “
হোটেলের এ নিরাপত্তা কর্মী বলেন, “ ঘটনার পরপরই হোটেল ম্যানেজারসহ কর্মচারীরা পালিয়ে যান। মূল ঘটনাটি কি তাঁরাই ভাল বলতে পারবেন। “
একই ধরণের তথ্য দিয়েছেন হোটেলটির পার্শ্ববতী দোকানী ফরিদুল ইসলাম।
তবে উখিয়া উপজেলার ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা হামিদা বেগমসহ কয়েকজন বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারি আব্দুল হামিদ নামের এক আত্মীয়ের বাবার বার্ষিক কূলখানি উপলক্ষ্যে মেজবানের আয়োজন করেন। মেজবান উপলক্ষ্যে নিমন্ত্রণ খেতে তারা হোটেলে এসেছিলেন। মেজবান খেয়ে তারা ক্যাম্পে ফিরে যেতেন। কিন্তু তার আগেই পুলিশ হোটেলে এসে তাদের আটক করেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম জানান, হোটেলটির ম্যানেজারসহ কর্মচারীরা অনুমতি ছাড়া অনুষ্টান আয়োজন এবং বিদেশি নাগরিকরা অবস্থানের ব্যাপারে পুলিশকে অবহিত করেননি। তারা পলাতক থাকায় পুলিশ হোটেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে পারেনি। হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলার পর পুলিশ দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
চাটগাঁ নিউজ/এমআর