নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার বাসিন্দা রোকন হোসেন। রোকন (৪৭) পেশায় একজন কৃষক। পেট ব্যথা ও আকস্মিক পেট ফোলা নিয়ে এক প্রকার বাধ্য হয়েই তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করান ছেলে আরিফ হোসেন।
গরিব-অস্বচ্ছল কৃষক পরিবারের সন্তান আরিফ বাবার চিকিৎসার পেছনে গত ১২-১৩ দিনে ব্যয় করেছেন প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। দৈনিক বাবার ঔষধ কিনতেই খরচ হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। যা তার পক্ষে বহন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বেগ পেতে হচ্ছে বাবার সুচিকিৎসার । এমতাবস্থায় তার দিকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ‘রোগীকল্যাণ সমিতি’।
সরেজমিনে রোগীকল্যাণ সমিতির কার্যালয়ের সামনে দেখা হয় রোকন হোসেনের ছেলে আরিফের সাথে। এ সময় আরিফ বলেন, পেট ব্যথার কারণে দুই সপ্তাহ আগে বাবাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করাই। প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকার ঔষধ কিনতে হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ, যা জমা ছিল তা দিয়ে বাবার চিকিৎসার খরচ চালাচ্ছি। এত টাকা খরচ করার সামর্থ্য আমার পরিবারের নেই।
আরিফের দুর্দশা দেখে একজন কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বললে তিনি সেখানে সাহায্যের আবেদন করেন বলে চাটগাঁ নিউজকে জানান।
একইভাবে ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকল্যাণ সমিতিতে যোগাযোগ করেন পটিয়া থেকে চিকিৎসা করাতে আসা হালিমা বেগম (৪০) নামের আরো একজন রোগী। হালিমা চাটগাঁ নিউজকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখালে তারা চট্টগ্রাম মেডিক্যালে রেফার করে। কিন্তু মেডিক্যালে আসার পথে তার চিকিৎসার জন্য আনা টাকা পথিমধ্যে হারিয়ে ফেলেন। পরে বিষয়টি কর্তব্যরত ডাক্তারকে জানালে তারা রোগী কল্যাণ সমিতিতে যোগাযোগ করতে বলে। হালিমাকে নিরাশ করেননি রোগী কল্যাণ সমিতি। তার যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় ও ঔষধ খরচের পাশাপাশি যাতায়াতের খরচও বহন করে সমিতি।
এভাবেই চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা গরীব-অসহায় ও দুস্থ রোগীদের ভরসার প্রতীক হয়ে কাজ করছে সমাজসেবা অধিদফতরের ‘হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যালয় ও রোগীকল্যাণ সমিতি’।
জানতে চাইলে রোগীকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সমাজ সেবা কর্মকর্তা অভিজিৎ সাহা চাটগাঁ নিউজকে বলেন, আমরা প্রায় প্রতিদিনই চমেক হাসপাতালের ২০-৩০ জনের আবেদন পাই। এসব আবেদন যাচাই-বাছাই করে আমরা দৈনিক ১০-১৫ জনকে সহযোগিতা করে থাকি। তবে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি অজ্ঞাতনামা রোগী, চিকিৎসা খরচ চালাতে অক্ষম এবং প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে , চমেক রোগীকল্যাণ সমিতিতে দুইটি ব্যাংক একাউন্টে তিনটি উৎসের মাধ্যমে অনুদান আসে। প্রথমত বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ বাৎসরিক হারে তহবিলের একটি অংশ প্রদান করে। আরেকটি অংশ আসে জাকাত ও ফিতরা থেকে। বাকি অর্থ পাওয়া যায় ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অনুদানের মাধ্যমে।
গেল ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ চমেক রোগী কল্যাণ সমিতিকে মোট ২৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে। এছাড়াও শুধুমাত্র চলতি বছরের মার্চ মাসেই (রমজান মাস) জাকাত-ফিতরা, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমে অনুদান এসেছে ৫৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। জাকাত-ফিতরা, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক মাধ্যমেই চমেক রোগীকল্যাণ সমিতির প্রায় ৭০ শতাংশ অনুদান আসে।
শুধুমাত্র ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রোগীকল্যাণ সমিতি থেকে মোট ৫১ হাজার ৬৬৪ জন অসহায় ও দুস্থ রোগী সহায়তা পেয়েছে। সর্বশেষ গেল মার্চ মাসেই রোগীকল্যাণ সমিতি থেকে সেবা পেয়েছে মোট ৪ হাজার ৫১ জন। যার পেছনে তহবিল থেকে খরচ হয়েছে ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৭২০ টাকা। এছাড়াও মাঝে মাঝেই হাসপাতালের নানা ধরণের গুরুত্বপূর্ণ মেশিন ক্রয়েও সহায়তা করে থাকে রোগীকল্যাণ সমিতি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিজিৎ সাহা বলেন, তহবিলের জন্য কোন বছর কত টাকা পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চিয়তা থাকে না। তবে আমাদের তহবিল কখনোই খালি থাকে না। আমরা প্রতি নিয়তই অসহায়-দুস্ত রোগীদের সহায়তা করে আসছি।
সাহায্য পেতে যা যা করণীয়
সমাজসেবা কার্যালয় রোগীদের একটি ফর্ম পূরণ করতে দেয়। ফর্মে রোগীর জন্য নিযুক্ত চিকিৎসকের স্বাক্ষর ও সাথে ব্যবস্থাপত্রের ফটোকপি দরকার হয়। এরপর এ ফর্মটি হাসপাতালের ঔষধের দোকানে পাঠায় কার্যালয়। উদ্দেশ্য- ঔষধগুলো সেখানে আছে কিনা তা জানা। এছাড়াও মাঝে মাঝে নগদ টাকাও প্রদান করা হয় সমিতি থেকে। ডাক্তার ও রোগীর স্বাক্ষর ছাড়া কোনো ভাবেই ঔষধ ও অর্থ দেওয়া হয় না।
চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/জেএইচ