নিজস্ব প্রতিবেদক: নগরীর অরক্ষিত ও উন্মুক্ত খাল-নালার তথ্য পেতে ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামে একটি অ্যাপ চালুর উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সেবা সংস্থার সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এ উদ্যোগের কথা জানান ।
মেয়র বলেন, নগরবাসীর অভিযোগ ও পরামর্শ সহজেই গ্রহণের জন্য ‘আমাদের চট্টগ্রাম’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ অ্যাপে যে কেউ নালা-নর্দমা, ম্যানহোল ঢাকনা, ডাস্টবিন বা খালের সমস্যা সংক্রান্ত ছবি আপলোড করে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। তিনি বলেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে আমরা নাগরিক সেবাকে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করে তুলতে চাই।
মেয়র বলেন, নগরের নালা ও খালগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও ম্যানহোলের ঢাকনা নেই, কোথাও স্ল্যাব মিসিং— এসব সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। চসিকের ছয়টি জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী ও আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ওয়ার্ডে কোথায় কোথায় এই সমস্যাগুলো রয়েছে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সভায় মেয়র জানান- চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড, বন্দর কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি বলেন, যদিও কিছু জায়গা সরাসরি কোনো সংস্থার আওতায় পড়ে না, তবুও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেগুলোতে কাজ করতে হবে। যেমন আগ্রাবাদের বক্স কালভার্টে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেছি কাজ করার জন্য।
ফায়ার সার্ভিস ও সিএমপির কার্যক্রমের প্রশংসা করে মেয়র বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিএমপি যেভাবে অবৈধ অটোরিকশা জব্দ করেছে, তা প্রশংসনীয়। এই অটোরিকশাগুলোই অনেক দুর্ঘটনার কারণ। ফায়ার সার্ভিসও সম্প্রতি দুর্ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হয়ে উদ্ধার তৎপরতায় ভূমিকা রাখছে।
মেয়র জানান, সাম্প্রতিক এক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে চসিক সচিবকে, সদস্য করা হয়েছে প্রধান আইন কর্মকর্তা, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাকে এবং সদস্য সচিব প্রধান প্রকৌশলীকে। সাত দিনের মধ্যে তারা রিপোর্ট দেবেন।
মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিক, সিডিএ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, নেভি ও সেনাবাহিনীসহ সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করছে। বিশেষ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সীমানার বাইরেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
পাহাড় কাটা ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। ইতোমধ্যে পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান শুরু হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বর্ষার আগে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে হবে।
তিনি জানান, জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে প্রতিটি ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী ও আঞ্চলিক কর্মকর্তারা স্ল্যাব ও ম্যানহোল ঢাকনার অনুপস্থিতি চিহ্নিত করছেন। এসব স্থানে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
নগরবাসীর সচেতনতাকে জলাবদ্ধতা মোকাবিলার অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি ও নালায় পলিথিন ফেলা নগর ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে নাগরিকদের সচেতন থাকতে হবে। শহরকে নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এটা আমাদের শহর, আমাদের দায়িত্ব। চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও জলাবদ্ধতামুক্ত রাখার এই যাত্রায় সকল নাগরিককে পাশে চাই।
তিনি জানান, নগরীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে পাওয়ার চায়নার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্ভাব্য অংশীদারত্ব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান ২১টি খাল পুনঃখনন ও সংস্কারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে যে, সিটি কর্পোরেশন অনুমোদন দিলে এবং অর্থায়ন নিশ্চিত করা হলে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে সরাসরি খাল সংস্কারের কাজ শুরু করতে প্রস্তুত।
তবে মেয়র উল্লেখ করেন, বর্ষাকাল আসন্ন হওয়ায় বর্তমানে খাল সংস্কারের মতো সময়সাপেক্ষ কাজ নয়, বরং জরুরি ভিত্তিতে খাল ও ড্রেনসমূহ পরিষ্কারের কাজকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি মাধ্যমিক স্তরের প্রকল্প হিসেবে বর্ষাকালের পরে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নিয়েছি বর্ষাকালের জলাবদ্ধতা মোকাবিলা। এজন্য খাল পরিষ্কার ও ড্রেন ব্যবস্থাপনার কাজ জোরদার করা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, মেয়রের জলাবদ্ধতা বিষয়ক উপদেষ্টা শাহরিয়ার খালেদ, সিডিএ, সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড, মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা, বন্দর, পরিবেশ অধিদপ্তর, পানির উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ।
চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/জেএইচ