চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: অনুমোদনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল রিপোর্ট দেওয়াসহ নানান অভিযোগ এলে চলে অভিযান। কিন্তু জরিমানা দিয়েই এসব প্রতিষ্ঠান আবারও শুরু করে ব্যবসা।
তবে এবার কঠোর হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেলা-উপজেলায় অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধে রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে বিশেষ অভিযান।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা সম্বলিত চিঠি ১১ জেলার সিভিল সার্জনের কাছে পাঠানো হয়। চিঠিতে লাইসেন্সবিহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ব্লাড ব্যাংকের কার্যক্রম ১০ কার্যদিবসের মধ্যে বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তালিকায় ১১৮টি হাসপাতাল ও ১২২টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে লাইসেন্সবিহীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় অনিবন্ধিত হাসপাতালের সংখ্যা ৬টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১১টি।
ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ইফতেখার আহমেদ জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী তালিকা তৈরি করে সিভিল সার্জনদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যেসব প্রতিষ্ঠানে লাইসেন্স ছাড়াই সেবাদান কার্যক্রম চলছে, তাদের তালিকা দেওয়া হয়েছে।
তবে প্রকৃতপক্ষে জেলা ও উপজেলায় অবৈধভাবে চলমান হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে মত ভুক্তভোগীদের। জেলায় স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫৮০টিরও বেশি। শুধু লাইসেন্স কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র নয়, অনুমোদন থাকা অনেক হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের নিয়োগপত্রও নেই। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তালিকা না থাকা, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের লাইসেন্স, প্যাথলজিস্ট, রিপোর্ট প্রদানকারী চিকিৎসক ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের নামও নেই অনেক হাসপাতাল-ক্লিনিকে।
লাইসেন্স না থাকাসহ নানান অভিযোগে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী। এগুলো হলো- অগ্রণী ল্যাব ও ডায়গনস্টিক সেন্টার, সেবা ডেন্টাল অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টার, নিউ চাঁদের আলো হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ন্যাশনাল চক্ষু হাসপাতাল।
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেগুলো হলো- বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের কপি প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশপথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে হবে। সকল বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্যাদি সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকতে হবে। একইসঙ্গে তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল হিসেবে আছে, কিন্তু শুধুমাত্র ডায়াগনস্টিক অথবা হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে তারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যতিরেকে কোনোভাবেই নামে উল্লেখিত সেবা প্রদান করতে পারবে না। ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রে যে ক্যাটারগরিতে লাইসেন্স প্রাপ্ত, শুধুমাত্র সে ক্যাটাগরিতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না। ক্যাটারগরি অনুযায়ী প্যাথলজি বা মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, রোববার থেকে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানে হাসপাতালে ১০টি নির্দেশনার বাস্তবায়ন না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/এমআর