চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : অপমান সহ্য করতে না পেরে এক কলেজছাত্রের আত্মহত্যা করেছে অভিযোগে কোতোয়ালী থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) আরমান হোসেনসহ দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে আদালতে।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম বেগম নুসরাত জাহান জিনিয়ার আদালতে মামলা করেছেন ওই কলেজছাত্রের বাবা মামুন আহাম্মেদ। তাদের বাসা চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার লালখান বাজার এলাকায়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, সামান্য অভিযোগের ভিত্তিতে কলেজছাত্র ও তার মা-বাবাকে থানায় ডেকে নিয়ে চরম অপমান ও মানসিক নির্যাতন করেন আরমান। সহ্য করতে না পেরে সেদিনই ওই তরুণ আত্মহত্যা করেন।
মামলায় অভিযুক্ত দুজনের মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা আরমান হোসেন বর্তমানে কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্বে আছেন। ঘটনার সময় তিনি চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ছিলেন। এ ছাড়া মামলায় নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার এলাকার বাসিন্দা এক তরুণীকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে, যিনি ওই ছাত্রের প্রেমিকা ছিলেন। তাদের মধ্যে তিন বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী রিক্তা বড়ুয়া বলেন, ‘মানসিক অত্যাচার ও চাঁদা দাবির মাধ্যমে একজন কলেজছাত্রকে আত্মহত্যায় প্রভাবিত করার অভিযোগে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত মামলা গ্রহণ করে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।’
মামলার বাদী মামুন আহাম্মেদ জানান, তিনি পেশায় সিএনজি অটোরিকশার মালিক ও চালক ছিলেন। তার ছেলে মিনহাজুল ইসলাম রাফি (২০) চট্টগ্রামের ইসলামিয়া কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর নিজ বাসায় তিনি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় তিনি খুলশী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছিলেন।
মামুনের অভিযোগ, একসময় রাফি জানতে পারে, ওই মেয়ে একইসঙ্গে আরও একজনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। বিষয়টি রাফি মেয়েটির বাবাকে টেলিফোনে জানিয়ে দেয়। এতে তার বাবা ক্ষুব্ধ হয়ে ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। জিডিতে অভিযোগ করা হয়, রাফি তার মেয়ের অশ্লীল কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। সামান্য একটি জিডির ভিত্তিতে আমার ছেলেকে ২০ ডিসেম্বর থানায় ডেকে নিয়ে যায় পুলিশ ইন্সপেক্টর আরমান হোসেন। রাফির মোবাইল অনেকবার চেক করেন। কিন্তু সেখানে দুজন মিলে বেড়ানোর ২-৩টি স্বাভাবিক ছবি ছাড়া আর কিছুই পাননি তিনি।
তিনি বলেন, এরপর আমাকে ফোন করে দুই লাখ টাকা নিয়ে থানায় যেতে বলেন। না হলে রাফিকে মাদক ও অস্ত্র মামলায় চালান করে দেওয়ার হুমকি দেন। আমি ও আমার স্ত্রী থানায় যাবার পর আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমার স্ত্রীকে বলেন, তার আকাম-কুকামের জন্য নাকি এমন ছেলের জন্ম হয়েছে। আমার ছেলেকে বারবার কুলাঙ্গার ডেকে শাসাচ্ছিলেন। সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে আমাদের তিনজনকে থানায় আটকে রেখে মানসিক অত্যাচার করেন।’
মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, দুই লাখ টাকা ২৪ ডিসেম্বর পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এবং নগদ ৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর তারা তিনজন রাত ১০টার দিকে থানা থেকে বাসায় যাবার অনুমতি পান। তবে রাফির মোবাইল জব্দ করে রাখেন। বাসায় ঢোকার আগে মামুন স্থানীয় একটি মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য ঢোকেন। তার স্ত্রী দোকান থেকে নাস্তা কিনতে যান। রাফি বাসায় চলে যায়। মামুন ও তার স্ত্রী বাসায় ফিরে বারবার ডাকার পরও দরজা খোলেনি রাফি। পরে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে তারা দেখেন, রাফি গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বর্তমানে কুতুবদিয়া থানার ওসি আরমান হোসেন বলেন, ‘ওই ছেলের সঙ্গে এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে ঠিক হওয়ায় ছেলেটি তাকে হুমকি দেয় যে, তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি-ভিডিও, কাট-পিস বানিয়ে আত্মীয়স্বজন ও বরপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবে। ফেসবুকে ছড়িয়ে দেবে বলেও হুমকি দেয়। তখন মেয়েটির বাবা থানায় জিডি করেন। আদালতের নির্দেশে আমি জিডিমূলে ওই ছেলে এবং তার অভিভাবককে থানায় ডেকে আনি। তারা বিকেল ৫টার দিকে এসেছিলেন। বিধি মোতাবেক জিজ্ঞাসাবাদ করি এবং ছেলেটির মোবাইল জব্দ করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা তিনজন থানা থেকে চলে যান। রাত ১১টার দিকে শুনি ওই ছেলে আত্মহত্যা করেছে। এ বিষয়ে খুলশী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলাও করেন তার বাবা। সেখানে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। এখন দেড় বছর পর এসে চাঁদা দাবি কিংবা মানসিক নির্যাতনের যেসব অভিযোগ করছেন, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। থানা থেকে বাসায় যাবার পথে ছেলেকে যদি বাবা-মা শাসন করেন, সেজন্য ছেলে যদি আত্মহত্যা করে, সেই দায় তো আমার ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ