নিজস্ব প্রতিবেদক : হাইকোর্টের নির্দেশনার ছয় বছর পার হলেও যানবাহনে হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধ হয়নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হাইড্রোলিক হর্ন বাজিয়ে ছুটছে যানবাহন। মামলা আর জরিমানাতেই পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সব উদ্যোগ সীমাবদ্ধ থাকলেও এমন হর্ন ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। ফলে হাইড্রোলিক হর্নের যন্ত্রণার পাশাপাশি উচ্চ শব্দের সাইরেনের অহেতুক ব্যবহার মানুষের অস্বস্তির কারণ দাঁড়িয়েছে। বিরক্ত হয়ে কখনও তর্কাতর্কি বা হাতাহাতিতে জড়ানোরও ঘটনা ঘটছে।
তবে মানুষকে সচেতনতার পাশাপাশি ট্রাফিক বিভাগ অভিযান জোরদার করলে হাইড্রোলিক হর্নের এমন তাণ্ডব থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে বলে মনে করেন সচেতনমহল।
জানা গেছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার কিছুটা কমলেও সম্প্রতি আবারও তা বাড়ছে। বিশেষ করে বাইকারদের বেশি হর্ন ব্যবহার করতে দেখা গেছে। নগরের উঠতি বয়সী ধনীর দুলালেরা রাত নামতেই সাইলেন্সার ছাড়া পাইপ ও ডিজিটাল হর্ন বাজিয়ে বিকট শব্দ করে গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল হাকিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছেন।
অনেক বাইকার তাদের গাড়ির নিজস্ব হর্ন খুলে দিয়ে বাস বা প্রাইভেটকারের হর্ন লাগাচ্ছেন। আর এসব হর্ন চট্টগ্রাম নগরের আগ্রবাদ, কদমতলী, মুরাদপুরসহ গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রির দোকানগুলোতে হরদম এ ধরনের নিষিদ্ধ হর্ন বিক্রি হচ্ছে।
তবে এভাবে গাড়ির হর্ন পরিবর্তন করা অনুচিত বলে ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান। হাইড্রোলিক হর্নের পাশাপাশি উচ্চ শব্দের হুটার বা সাইরেনের অহেতুক ব্যবহার মানুষের বিরক্তির বিষয় জানা গেছে। চাটগাঁ নিউজের সরেজমিনে এই উচ্চ শব্দ নিয়ে মানুষের বিরক্তির প্রতিক্রিয়া ওঠে এসেছে।
সোমবার (১৫ জানুয়ারি) নগরীর হেমসেন লেনে একটি মোটরবাইকের চালক হঠাৎ একটি গলির ভেতরে হর্ন দেন। প্রাইভেটকারের হর্নের কারণে এলাকার বায়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি জয়নাল আবেদীন অনেকটাই ধমকের সুরে গলির ভেতর এমন হর্নের কারণ জানতে চান। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওই তরুণ ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, আপনাকে বলতে হবে, আপনার টাকায় গাড়ি কিনেছি না রাস্তা আপনার? এ নিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলতার সৃষ্টি হয়।
আন্দরকিল্লা ও জামালখান সড়কের পাশে অবস্থিত দোকানদাররা সারাদিন বিভিন্ন গাড়ির হর্ন শুনে অনেকটাই বিরক্ত। আসকার দিঘী পাড়ের ফার্নিচারের দোকানদার সেলিম উদ্দিন বলেন, সকালে দোকান খোলার পর থেকেই রাতে বন্ধ করা পর্যন্ত শব্দের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। এসি করা দোকান হলে শব্দ একটু কম লাগে। নানা রকম গাড়ির হর্ন এর মধ্যে পুলিশের, অ্যাম্বুলেন্সের বাজানো সুরতো আছেই।
চকবাজারে পিকআপ চালক দেবাশীষ দত্ত এমন হর্ন লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, এখনো পুলিশ ধরেনি। অনেক সময় পুলিশের সামনে বাজালেও কিছু বলে না।
তিনি আরও বলেন, এটি ভিআইপি হর্ন। সাধারণ হর্ন বাজালে পাত্তা দেয় না। তাই রাস্তায় চলতে গেলে হাইওয়েতে এটি খুব কাজে লাগে।
জানা গেছে, হাইড্রোলিক হর্ন বন্ধে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রিট করেছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ২০১৭ সালের রায়ে হাইকোর্ট হর্ন বন্ধের নির্দেশ দেন।
তিনি জানান, হর্ন ব্যবহার করায় পুলিশ খুবই নমনীয় শাস্তি দিচ্ছে। একশ থেকে দুইশ টাকা জরিমানা নিয়েই গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়। শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হলে অবস্থার আরও উন্নতি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া (বিপিএম) বলেন, হাইড্রোলিক হর্ন বাজানোর সুযোগ নেই। যারা বিধি বিধান না মেনে এই হর্ন বাজাই আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশের গাড়িসহ যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গাড়িতে এই ধরণের হর্ন ব্যবহারের অনুমতি আছে এর বাহিরে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এখন যত্রতত্র ব্যবহারের বিষয়টি যেহেতু জেনেছি কঠোর নজরদারি করা হবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ