স্বল্প মেয়াদী মেলা ঘিরে মন ভার সবার

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়িস্থ উচ্ছেদকৃত শিশু পার্কের জায়গায় অনুষ্ঠিত এবারের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার স্থায়িত্ব মাত্র ছয় দিন। ১১ ‍ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন পর্যন্তই মেলা চলবে।

আপাতত মেলার মেয়াদ বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই আয়োজক জেলা প্রশাসনের। ঐতিহ্য ও চাহিদার কথা ভেবে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য মেলা উদযাপন পরিষদ নানামুখী আবদার করলেও এই নিয়ে ইতিবাচক কোন উত্তর পায়নি পরিষদ।

মাত্র ছয়দিন মেয়াদী এবারের বিজয় মেলা ঘিরে সবার মনে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি মনোকষ্টও বিরাজ করছে। তাই অন্যান্য বারের চেয়ে এবার মেলায় দর্শণার্থীদের ভিড় বেশি। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন একেবারে। এতে করে মেলা প্রাঙ্গনে ব্যাপক লোক সমাগমের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সড়ক এলাকায় দিনভর যানজট লেগেই থাকছে।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বিজয় মেলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হস্তশিল্প, মৃৎশিল্প, গৃৃহস্থালি সামগ্রী, নামকরা খাদ্য সামগ্রী, বাঁশ বেতের সামগ্রী, কাঠের তৈরি সামগ্রী, গৃহসজ্জা, শাড়ি-চুড়ি, শিশুতোষ খেলনাসহ নানান ঐতিহ্যবাহী পণ্যের পসরা নিয়ে বিক্রেতারা এসেছেন। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন স্বাদের টক ঝাল মিষ্টি আচার, মুড়ি-মুড়কি, তিলের টফি, মন চটচটি, মন্ডা-মিঠাই পণ্যও।

কুমিল্লা থেকে মৃৎশিল্প পণ্য নিয়ে আসা বিক্রেতা মো. সাদাত জানান, এবার মেলা কোথায় হবে সেটা নিয়েই চিন্তায় ছিলাম বেশ কয়দিন। পরে খবর পেলাম শিশু পার্কের জায়গাতে মেলা হবে। মেলায় লোক সমাগম প্রচুর। বেচাবিক্রিও ইনশাল্লাহ ভাল। মহিলারা কেউ ঘর সাজানোর শো পিস , কেউ পিঠাপুলি বানানোর বাসন কোসন কিনে থাকেন। তবে আরও কয়েকদিন থাকলে ভাল হতো। বিজয় মেলা বলে কথা।

লোকমান আলী এসেছেন সন্দ্বীপ থেকে মহিষের দই নিয়ে। মাটির পাতিলে করে বিক্রি করছেন তিনি সন্দ্বীপের নামকরা মহিষের দই। তিনি বলেন, আমি অন্যান্য সময়েও চট্টগ্রাম শহরে দই নিয়ে আসি। এবার মেলা উপলক্ষে আমার ছেলেকেও সাথে নিয়ে আসলাম। বেচাবিক্রি মোটামুটি। শীতকাল তো। মানুষ ঠান্ডা জিনিস একটু কম খায়।

মেলায় বেশি ভিড় দেখা গেছে শাড়ি-চুড়ির স্টলগুলোতে। এসব স্টলে মহিলারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। ক্রেতা সামলাতে বিক্রেতারা মহাব্যস্ত। কথা বলার কোনো ফুরসৎ নেই তাদের।

বহদ্দারহাট খাজা রোড থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন মো. মনির হোসেন। শাড়ি চুড়ির স্টলে তার স্ত্রী আর ভাইজিরা ব্যস্ত। তিনি কোলে তিন বছরের মেয়ে নিয়ে একটু নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে। কথা হলে তিনি বলেন, মহিলারা শাড়ি-চুড়ি দেখছেন। মেলায় আসলে মহিলাদের দৃষ্টিই থাকে শাড়ি-চুড়ির স্টলে। আগে বিজয় মেলা দীর্ঘদিন ধরে হতো। এবার নাকি ছয়দিন মাত্র।

মেলায় বিকেলের দিকে ফুডকোর্টগুলো জমে উঠতে দেখা গেছে। ঢাকাইয়া কাবাব অ্যান্ড ফুড ভ্যালি, রসুইঘর, চাটগাইয়া পিৎজাসহ নানাা নামের ফুড কার্টগুলো ঘিরে নানা বয়সি লোকজনের ভিড় লেগেই থাকছে।

বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব আহমেদ নেওয়াজ বলেন, মেলার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আমরা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেছিলাম। আমি ঢাকায়ও গিয়েছি। সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তবে মাঠের মালিক সেনাবাহিনী। উনারা এই ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, ১৯৮৯ সালে আমরা প্রথম এখানে বিজয় মেলা করেছিলাম। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুকী আজম বীর প্রতীকের উদ্যোগে আমরা চট্টগ্রামে প্রথম বিজয় মেলার আয়োজন করি। পরপর দুই বার আমরা করেছি। তারপর এই মেলা অন্য কারো হাতে চলে যায়। দীর্ঘ দিন পর বর্তমান সেই ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীকের নির্দেশনায় আবার মেলার হচ্ছে । সরকার এ মেলা আয়োজনে আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি 

Scroll to Top