নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলারের ইঞ্জিল বিকল হয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন ১৫ মাঝি-মাল্লা। নিখোঁজের ১৪ দিন পর তারা পরিবারের কাছে ফিরে এসেছে। হারানো স্বজনদের ফিরে পেয়ে ঘরে ঘরে বইছে খুশির জোয়ার।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে তারা ট্রলারে করে চট্টগ্রামের আনোয়ারার রায়পুর ইউনিয়নের শঙ্খ নদী হয়ে উপকূলে পৌঁছান বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।
ফিরে আসা জেলেদের একজন জালাল উদ্দিন। তিনি চাটগাঁ নিউজকে বলেন, টানা ১২ দিন সাগরের লোনা পানিতে ভাসছিলাম। এরমধ্যে খাবারও ফুরিয়ে আসে। কিছু শুকনো খাবার ছিল। পানি আর সেই শুকনো খাবার খেয়ে চারদিন পর্যন্ত ছিলাম। তখন আল্লাহ্ আর মা-বাবাকে স্মরণ করেছিলাম। এক পর্যায়ে ফিরে আসার আশা ছেড়ে দিলাম। হঠাৎ মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজের দেখা মিলে৷ তারা আমাদের দেখতে পেয়ে খাবার ও পানি সহায়তা দেয়। পরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গিয়ে আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
ছয় বছরের শিশু সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে জেলে মহিউদ্দিন বলেন, ‘মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। আবার পরিবারের দেখা পাব সেই আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। সাগরের বড় বড় ঢেউ এখনও চোখে ভাসছে। বিকল ট্রলার নিয়ে এই ঢেউ অতিক্রম করেছি। তখন শুধু আল্লাহকে ডেকেছি।’
মৎস্যজীবী মোরশেদের বাবা আবুল কালাম বলেন, পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য ছেলে সাগরে গিয়েছিল। নিখোঁজের খবর শুনে এই ১৪ দিন একমুঠো ভাত আমরা মুখে দেইনি। আজ আমাদের ঈদের চেয়েও বেশি খুশি লাগছে।’
এরআগে গত ৩ জানুয়ারি ১৫ জেলে এফবি মা জননী নামের একটি ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যান। ওইদিন রাতে ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সেই থেকে সাগরে ভাসছিলেন তারা। কূল-কিনারাহীন সাগরে হারিয়ে যান তারা, ফুরিয়ে আসে খাবার। চরম সংকটে পড়া জেলেরা ভাসতে ভাসতে একসময় দেশের সমুদ্রসীমা পেরিয়ে পৌঁছে যান মিয়ানমার জলসীমায়। জেলেদের একজন ফোন করে তাদের অবস্থানের কথা জানান ওবায়দুল হক মুন্না নামের ট্রলারের মালিককে। তিনি বিষয়টি কোস্টগার্ডকে অবহিত করেন।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ট্রলারসহ জেলেদের উদ্ধার করে নিয়ে আসেন সেন্টমার্টিন উপকূলে। সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড জেটিতে বিকল ট্রলারটির ইঞ্জিন মেরামতের কাজ শেষে ওই ট্রলারে করে বুধবার সকালে আনোয়ারায় ফিরে আসেন জেলেরা।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ