চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের তৈরি করা হাজার হাজার বেনজীর-আজিজ দেশটাকে গিলে খাচ্ছে। দুর্নীতির কারণে সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ হওয়ার পর সরকারই তাকে বাঁচাতে গোপনে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।
তিনি আজ মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘চট্টগ্রাম ফোরাম’ আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘জাতিসত্তার রূপকার : রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান’ শীর্ষ সেমিনারে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার বেনজীর মত চোর, ডাকাতকে বাঁচাবার জন্যে গোপনে তাদের বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। আমাদের ভাবতে লজ্জা হয়, বলতে লজ্জা হয়। আমাদের পুলিশ বাহিনীর সাবেক প্রধান, র্যাবের সাবেক প্রধান (বেনজীর আহমেদ) তার বিরুদ্ধে প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় পাতায় দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে।
সারা দেশে এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে সে জায়গা কিনেনি বা দখল করেনি। এমন কি হিন্দু সম্প্রদায়ের জায়গা পর্যন্ত জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। আর এই সরকার ওই চোরকে, ডাকাতকে বাঁচানোর জন্য গোপনে পাচার করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসি আওয়ামী লীগ চায়নি। তারা সব সময় চেয়েছে তারা নিজেরাই একাই সবসময়ই দেশ শাসন করবে, আর কেউ করবে না। তারা লুটপাট করবে, সবকিছু তারাই নিয়ে যাবে এবং করেছেও তাই। ওই পাঁচ বছর ছিল আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বছর। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বপ্নকে সেদিন ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং প্রথম সংবিধান তারা কাটাছেঁড়া করে নষ্ট করেছিল। প্রথমে তারা বিশেষ ক্ষমতা আইন করেছে, এরপর তারা জরুরি অবস্থা আইন করেছে। সবশেষে যখন সামাল দিতে পারছিল না, তখন তারা সবগুলো রাজনীতি দলকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসন অর্থাৎ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।
আওয়ামী লীগ আবারও নতুন করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই শেখ মুজিবুর রহমান তিনি গণতন্ত্রের অভিসংবাদিতা নেতা ছিলেন। তার নেতৃত্বে মাত্র ১১ দিনের পার্লামেন্টের একটি সভায় সেদিন গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল তৈরি করা হয়েছিল। এই বাকশাল ছিল বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে। এই বাকশাল তৈরি করে তারা সমস্ত জাতিকে শৃঙ্খলিত করে ফেললেন। কারো কোনো ভিন্ন মত থাকতে পারবে না। এক নেতার এক দেশ। আজকে সেই আওয়ামী লীগ আবারও নতুন করে সেই বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্যে গত ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী যখন আক্রমণ করল, সবাই পালিয়ে ছিলেন। সেই মুহূর্তে চট্টগ্রাম বেতার থেকে মেজর জিয়া বলেছিলেন, “স্বাধীনতা ঘোষণা করছি,” যা স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠেছিল বাংলাদেশে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। ‘আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের এত বিরোধিতা করে কিন্তু পাসপোর্ট থেকে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ বাদ দিতে পারেনি। তারা জিয়াউর রহমানকে ছোট করে দেখাতে চায় এবং তার নাম মুছে ফেলতে চায়। কিন্তু ইতিহাস জিয়াকে ধারণ করেছে। তাকে চাইলেই তাকে মুছে ফেলা যায় না। বাংলাদেশে যা কিছু সুন্দর এবং সম্ভাবনাময় সবকিছুই চালু করেছিলেন জিয়া।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ফোরামের আহ্বায়ক একরামুল করিম। কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, সহ কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সম্মিলিতি পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনওয়াজ, সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান প্রমুখ।
চাটগাঁ নিউজ/এসআইএস