নিজস্ব প্রতিবেদক : আদালতের রায়ের পর চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও তিনি আদৌ মেয়রের চেয়ারে বসতে পারবেন কিনা- বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ আগেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সব মেয়র, জেলা-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের বরখাস্ত করে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল বিভিন্ন সূত্র বলছে, এমন এক সময়ে এই প্রজ্ঞাপন এলো, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব পালনে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে আদালতে রায়ের সুপারিশে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হলেও ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়রের চেয়ারে বসতে পারছেন না!সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের জনপ্রতিনিধি বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বলী হতে যাচ্ছেন ডা. শাহাদাত হোসেন- এমনটাই আলোচনা এখন সবার মুখে মুখে।
চট্টগ্রাম নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, প্রজ্ঞাপন জারির সংবাদটি তারা শুনেছেন। তবে সেটি তাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।
আদালতের রায় এবং ইসির প্রজ্ঞাপন জারির পরও ডা শাহাদাত হোসেনের চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের চেয়ারে বসার ভাগ্য সুপ্রসন্ন নয়- এমন মন্তব্যের পিছনে আরও কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তা হলো- ১. অন্তর্বর্তী সরকার স্থানীয় সরকারের সকল মেয়র, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের বরখাস্ত করে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া।
২. বর্তমানে নির্বাচন কমিশন রদ করা অবস্থায় রয়েছে। কমিশনারের অনুপস্থিতি।
৩. ডা. শাহাদাত হোসেন যদি মেয়রের চেয়ারে বসতে পারেন তাহলে নির্বাচনে হেরে বা নির্বাচনে কারচুপি, দুর্নীতি নিয়ে যেসব সিটি মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান বা পৌর মেয়ররা নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন, চেয়ার পাওয়ার জন্য তারাও মামলা সচল করার উদ্যোগ নেবেন।
৪. আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর আপিলের সুযোগ রয়েছে। যদিও তিনি বর্তমানে অপ্রকাশ্যে রয়েছেন।
৫. আদালতের নির্দেশ মেনে জারি করা প্রজ্ঞাপন কতদিনের জন্য? সেটিও স্পষ্ট নয়। চসিকের নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ হচ্ছে পাঁচ বছর। এরই মধ্যে তিন বছর আট মাস শেষ। বাকি থাকে এক বছর ৪ মাস। ফলে ডা. শাহাদাত হোসেন আগামী কত মাসের জন্য মেয়রের চেয়ারে বসতে পারেন?
মঙ্গলবার রাতে নির্বাচন কমিশনের সচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। আদালতের নির্দেশে ইসি এই প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। শাহাদাত হোসেন পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। ভোটের এক মাস পর ২৪ ফেব্রুয়ারি কারচুপির অভিযোগ তুলে সেই ফলাফল বাতিল চেয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন শাহাদাত।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ১ অক্টোবর সেই মামলার রায় দেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীন। রায়ে ১০ দিনের মধ্যে শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণার গেজেট প্রকাশের নির্দেশও দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন থেকে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।
গত ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউলকেও অপসারণ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। সিটি কর্পোরেশনে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম চালানোর জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ