‘সমন্বিত প্রয়াসে চট্টগ্রামকে পরিকল্পিতভাবে সাজাব’

সিপ্লাসটিভির জনতার আদালতে চসিক মেয়র

নিজস্ব প্রতিবেদক : একশ দিনের হানিমুন পিরিয়ড শেষে সিপ্লাসটিভির ‘জনতার আদালতে’ হাজির হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় আগামী এক বছর নগর উন্নয়নে নানা কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। একইসঙ্গে বর্তমানে বাংলাদেশের একমাত্র মেয়র হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালনে গত একশ দিনের কাজের বর্ণনাও দিয়েছেন তিনি।

সিপ্লাসটিভি ও চাটগাঁ নিউজের প্রধান সম্পাদক আলমগীর অপুর সঞ্চালনায় আলোচনার শুরুতেই মেয়র বলেন, প্রতিটা মানুষের আলাদা আলাদা রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতেই পারে। তবে আমি কাজকে বেশি প্রধান্য দিই। আমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ঋণ মাথায় নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। এই পথ চলা আমার জন্য বেশ কঠিন। তবে আমি নগরবাসীকে একটি গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি সিটি উপহার দিতে চাই।

এ সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নিয়ে মেয়র শাহাদাত বলেন, ইতোমধ্যেই অবৈধ মেয়র রেজাউল করিম নগরীর বিভিন্ন কাজ ও প্রকল্পে প্রায় ৫৬২ কোটি টাকার অর্ডার দিয়েছেন। এই প্রকল্পগুলো আমি ভালোভাবে খতিয়ে দেখছি। যদি কাজের গুণগত মান ভালো না হয় তবে ঠিকাদাররা বিল পাবে না।

আগামী এক বছরের কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলার শুরুতে মেয়র বলেন, প্রথমত চট্টগ্রাম শহরকে দূষণমুক্ত রাখতে চাই। নিজের শহরকে পরিষ্কার দেখতে আমার বেশ ভালোই লাগে। মাঝে মাঝেই আমি নগর পরিদর্শনে বের হই। কোথায় কি কাজ হচ্ছে তা দেখি। কোনো এলাকা অপরিষ্কার মনে হলে সেবকদের দিয়ে তা আবারও পরিষ্কার করাই।এছাড়া জনতার আদালতে মেয়র নগর উন্নয়নে নানা বিষয়ে কথা বলেন। এ সব বিষয়গুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

মশার উপদ্রব
মেয়র বলেন, নগরীর অনেক কিছুর জন্য আমরা নিজেরাই দায়ী। জনগণ সচেতন হলে নগর এমনিতেই সুন্দর হয়ে যাবে। কারণ অপরিষ্কার-নোংরা জায়গায় মশার বসবাস। মশা নিধন করতে হলে সর্ব প্রথম আমাদের যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে হবে। পলিথিনের ব্যবহার কমাতে হবে। পলিথিন নালা-নর্দমায় আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। ফলে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি মশার উপদ্রব বেড়ে যায়।

৪১ ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নির্মাণ
আমি নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি মাঠের ভিত্তিপ্রস্থ স্থাপন করেছি, এই ব্যাপারটা আমাকে বেশ আনন্দ দেয়।

পার্ক নির্মাণ
নগরীর ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানকে গ্রিন পার্ক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র বলেন, যে পার্কে মহান মুক্তিযুদ্ধে সত্য ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হবে। মেয়র বলেন, পরবর্তী জেনারেশন আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের সত্য ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিতে হবে।

নগরীর সব খাল জীবিত করতে হবে
খাল নিয়ে চসিক মেয়র বলেন, এক সময় চট্টগ্রাম নগরীতে ৩৬টা খাল জীবিত ছিল। কালের বিবর্তনে এখন তার কোনটিই সচল নয়। ইতোমধ্যেই অবৈধ মেয়র রেজাউল করিম খাল খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। তবে আমি আসার পর প্রকল্পের ঠিকাদাররা আমায় মাত্র ১৯টা খাল বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিল। আমি বলেছি আমার ৩৬টা খালই চাই। এর একটাও কম হলে আমি নিব না।

ওয়াসা, সিডিএ ও চসিকের সমন্বয়
চট্টগ্রাম ওয়াসা, সিডিএ ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয় প্রসঙ্গে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, সমন্বয়ের অভাবে নগরী উন্নয়ন প্রকল্প বেশিদিন টিকে না। কোটি টাকা খরচ করে রাস্তা নির্মাণ শেষ হতে না হতেই ওয়াসা যায় তার পানির লাইন ঠিক করতে। এভাবে চলতে থাকলে নগর কখনোই উন্নত হবে না। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বয়। আমি ওয়াসা সিডিএ’র পরিচালকদের সাথে বসেছি। আগামীতে আবারো বসবো, সবাই মিলে এক সাথে কাজ করবো। সবার সাথে বসে এক বছরের কর্ম পরিকল্পনা রেডি করবো।

জলাবদ্ধতা সমস্যা
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা জলাবদ্ধতা প্রতিরোধে সহযোগিতা করতে পারে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক খালগুলো পুনরায় খনন ও পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। খালগুলোতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা এবং পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা কার্যকর রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার অভিযান চালানো হবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতার সমস্যা বহুদিনের। তবে এটি সমাধানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রযুক্তিগত ও কাঠামোগত সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাওয়ার চায়না হারবার লিমিটেডের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ এ সমস্যা সমাধানে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সার্ভিস চার্জের ভাগ চায় চসিক
মেয়র শাহাদাত বলেন, মূলত নগরের রাস্তাঘাট সংস্কার ও উন্নয়নের লক্ষ্যেই আমি বন্দরের আয়ের একটি অংশ চাইছি। তিনি হতাশ হয়ে বলেন, অতীতেও অনেক মেয়র ছিলেন, কিন্তু কেউই সার্ভিস চার্জের নামে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অর্থ আদায় করতে পারেনি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, বিদ্যমান আইনের সংশোধন করা না হলে এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন।

মেয়র জানান, বন্দরের কাজে ব্যবহৃত দৈনিক অন্তত ১৫ হাজার ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যানসহ ভারী যানবাহন ওই নগরীর বিভিন্ন সড়কে চলাচল করে। চট্টগ্রামের অধিকাংশ সড়ক ৬-১০ টন বোঝার গাড়ির জন্য নির্মাণ করা হলেও বন্দরের ৫০-৬০ টনের বোঝা নিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। ফলে নগরীর সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তা সংস্কারে সিটি করপোরেশনের বাড়তি ব্যয় হয়। আর তাই সার্ভিস চার্জ হিসেবে বন্দরের বার্ষিক আয়ের ১ শতাংশ চেয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এটা সিটি করপোরেশনের যৌক্তিক পাওনা।

চসিকের হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়
হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে মেয়র শাহাদাত বলেন, চসিকের অর্থ যোগানের একটি বড় মাধ্যম হোল্ডিং ট্যাক্স। এ নিয়ে বেশ জটিলতা থাকলেও আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সব সমস্যার সমাধান করতে।

চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ

Scroll to Top