ক্রীড়া ডেস্ক: শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই গুঞ্জনটা শোনা গিয়েছিল। তা আরও বেড়ে যায়, কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেয়ার পর।
গুঞ্জন শেষ পর্যন্ত সত্যিতে রূপ নিল আজ। দেশের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বাফুফের সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন তাবিথ আউয়াল।
এখনো তফসিল ঘোষণা না হওয়ায় তাবিথ নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে ফুটবলের এই সংগঠক জানিয়ে রাখলেন, সভাপতি হলে চমক আনবেন মাঠের ফুটবলে।
সংবাদ সম্মেলনে তাবিথ বলেন, ‘চমক শব্দটি আমরা সবসময় ব্যক্তির সঙ্গে টেনে আনি। ফুটবলের চমক কিন্তু ব্যক্তি দিয়ে হবে না। ফুটবল চমকটা হবে তখন, যখন আসলে আমরা আন্তর্জাতিকভাবে আরেকটা স্বর্ণপদক নিয়ে আসব, আমরা ভালোভাবে খেলে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব অন্তত দ্বিতীয়-তৃতীয় রাউন্ডে যেতে পারব। আমি যদি সভাপতি হতে পারি, আমি খেলার মাঠে চমক দেখাব। ’
‘নির্বাচনের মাঠে যেটা হচ্ছে, যতক্ষণ না তফসিল ঘোষণা হয়, যতক্ষণ না কারা কারা নির্বাচন করতে চাচ্ছে, কোন পদে হতে চাচ্ছে, এটা না জানা পর্যন্ত এসব নিয়ে আলোচনা করাটা উচিত হবে না। মেধাবী-সৎ মানুষদের নিয়েই কমিটি হবে। আগে দেখি কারা কারা আগ্রহী কোন পদের জন্য। ’
এর আগে কাজী সালাউদ্দিনের কমিটিতে দুই মেয়াদে বাফুফের সহ-সভাপতি ছিলেন তাবিথ। যদিও লড়েছিলেন স্বতন্ত্রভাবে। গত নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জিততে পারেননি।
আগের দুই মেয়াদে নিজের দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ফুটবলের একজন ব্যক্তি, আমি ফুটবলের সঙ্গে আছি। ফুটবলের জায়গাটা আমরা অনেক সময় সীমিত করে রাখি। ফুটবলে কিন্তু শুধু খেলোয়াড় নয়, সংগঠক, ক্লাব, স্পনসর, রেফারি, ফিজিও, কোচরাও আছেন। আমি যেই দু মেয়াদে ছিলাম, অবশ্যই আমি স্বাধীনভাবে কাজ করেছি। কোনো বাধা পাইনি। ’
‘আমি একজন ব্যবসায়ী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আছি। বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আমি ডিএনসিসির নির্বাচনে লড়েছি দুবার। একইসঙ্গে আমি ২০১২ থেকেও বাফুফে নির্বাচন করছি, লড়ছি এবং দায়িত্ব পালন করছি। আমার মনে হয় না, আমি আমার রাজনীতি ও ক্রীড়ানীতিতে স্বার্থের সংঘাত করেছি। ’
তাবিথের আগে সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন তরফদার রুহুল আমিন। তাকে স্বাগত জানিয়ে তাবিথ বলেন, ‘আমরা সবাই ক্রীড়াবিদ। আমাদের মন মানসিকতা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। একটা নির্বাচন হতে যাচ্ছে আমরা সবসময়ই স্বাগত জানাই। যত ব্যক্তি মনে করেন, তারা এই পদের জন্য যোগ্য, তাদের সবাইকে আমি স্বাগত জানাই। প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই সবচেয়ে ভালো নেতা তৈরি করা যায়। আমি একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আবহাওয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসতে চাইব। ’
রুহল আমিনের প্রার্থিতা ঘোষণার অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হককে। ফুটবল ছাড়ার পর রাজনীতিতে এখন নিয়মিত মুখ। কাজ করছেন বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে। একই দলের হলেও আমিনুলের বিষয়টিকে ব্যক্তিগত পছন্দ হিসেবেই উল্লেখ করলেন তাবিথ।
তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি, বিএনপির কয়েকজন সদস্য আরেকজনকে সমর্থন দিতে পারে। সেই জায়গাটা আমরাও চাচ্ছি। আমরা উন্মুক্ত নির্বাচন দেখতে চাই। এখানে কিন্তু দলের পরিচয়, কর্মের পরিচয় বা জাতের পরিচয় মুখ্য নয়। যে ব্যক্তিকে মনে হয় ফুটবলের জন্য ভালো হবে, সে ব্যক্তিকেই সমর্থন দেবে। ’
‘আমিনুল হককে আমার মতো একটি দলের নিরিখে বন্দী করে রাখলে সেটা আমি মনে করি না উচিত হবে। কেননা আমিনুল হকও ফুটবল অঙ্গনের এক ব্যক্তি। উনি সাবেক অধিনায়ক ও এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতেছেন। এখন কে কোন পরিচয় দিয়ে কাকে সমর্থন করছে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। ’
তারুণ্যের জয়গান গেয়ে ৪৫ বছর বয়সী তাবিথ বলেন, ‘ফুটবলকে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। ঐ জায়গা থেকে আমি মনে করি হাল ধরার সময় এসেছে। দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসেছে। ফুটবল নিয়ে আমাদের যে চিন্তা-চেতনা, সেটা আমি আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরই জানাব। ’
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ