রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি : সকালে পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে ফেসবুকে সকলের দোয়া চেয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন নাজমিন আক্তার নামে রাঙ্গুনিয়ার এক গৃহবধূ। পাশাপাশি তার দুবাই প্রবাসী স্বামীও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। পরিবারের সবার মাঝে বিরাজ করছিলো উচ্ছ্বাস। কিন্তু তাদের সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সকালে সন্তানের জন্য দোয়া চাওয়া মা নাজমিন আকতার রাতেই মৃত্যুবরণ করেন।
মঙ্গলবার (১২ জুন) এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
মৃত নাজমিন আকতার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ফেরিঘাট এলাকার দুবাই প্রবাসী মো. রিমনের স্ত্রী।
এদিকে স্ত্রীর এমন মৃত্যুতে প্রবাস থেকে ছুটে আসেন স্বামী। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চন্দ্রঘোনা তৈয়্যবিয়া মাদ্রাসা মাঠে তার নামাজের জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। দেশে আসার পর স্ত্রীর মৃতদেহ সামনে পিতা-পুত্রের বিষাদময় দেখা হয়। যেই দেখাই উচ্ছ্বাসের পরিবর্তে ছিলো কান্নার রুল। প্রসবজনিত জটিলতা থেকেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা স্বজনদের৷ তবে এমন মৃত্যু মানতে পারছেন কেউই।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাতে নিহত নাজমিন আক্তারের ভাই আরিফ হোসেন ইউনুস বলেন, বছর দেড়েক আগে তার বোনের বিয়ে হয়। সোমবার (১০ জুন) রাতে সন্তান সম্ভাবা নাজমিনের প্রসব ব্যথা উঠলে স্বজনরা তাকে প্রথমে চন্দ্রঘোনা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে নোয়াপাড়া পাইওনিয়ার হাসপাতালে নেয়। সেখানে অপারেশন থিয়েটারেও নেওয়া হয়। পরে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। চমেকে নেয়ার পর মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সিজারিয়ার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাজমিন পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। এরপর তিনি সুস্থ ছিলেন, সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলেন। নিজের সন্তান হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়ে পোস্ট দেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, পুত্র সন্তানের মা হলাম।’
অন্যদিকে দুবাই প্রবাসী তার স্বামী রিমনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ফেসবুক পোস্ট দেন। সন্তানের বাবা হওয়ার খবর সবাইকে জানিয়ে তিনি লিখেছিলেন, ‘আল্লাহ তায়লার দরবারে লাখো কোটি শুকরিয়া, আমাকে রাজপুত্র দান করেছেন। মা ও সন্তান দুজনেই সুস্থ আছেন, আলহামদুলিল্লাহ। সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।’ এভাবে পরিবারের সবার মাঝে যখন উচ্ছ্বাস বিরাজ করছিলো, তখন দুপুরের দিকে তাকে রক্ত দেয়া হয়। রক্ত চলতে চলতেই তার খিচুনি ওঠে। দৃঢ়ে দৃঢ়ে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। রাতেই তার মৃত্যু হয়।
চন্দ্রঘোনা-কদমতলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইদ্রিস আজগর বলেন, উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলি ইউনিয়নে বনগ্রাম সাবস্টেশন এলাকায় নাজমিনদের বাড়ি। একই ইউনিয়নের ফেরিঘাট এলাকার মো. রিমনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তিন মাস আগে চাকরি নিয়ে দুবাই চলে যান রিমন। এভাবে সন্তানের জন্মদিয়ে স্ত্রীকে হারিয়ে পাগল প্রায় স্বামী রিমন দাফন করতে দেশে এসেছিলেন। নিজের স্ত্রীর রেখে যাওয়া শেষ চিহ্ন শিশুপুত্রকেও দেখেছেন। তবে সেই দেখা ছিলো বিষাদময়।
এদিকে সন্তান জন্মদিয়ে গৃহবধূর এমন মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে শোক বিরাজ করছে। বর্তমানে নবজাতক শিশু পিতার হেফাজতে বোনদের কাছে রয়েছে বলে জানা যায়।
চাটগাঁ নিউজ/জগলুল/এসআইএস