চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : ‘আমাকে সকালে বলেছিল ফিরতে ফিরতে রাত হবে। এখন একেবারেই চলে গেল। আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। এখন আমি ছেলে মেয়েদের কি বলবো।’ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরের সামনে বসে বিলাপ করছিলেন সীমা আকতার। পাশে পড়ে আছে স্বামী মো. ফারুকের মরদেহ।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) ফারুক মুরাদপুরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। মুরাদপুরের একটা ফার্নিচার কারখানায় কাজ করতেন ফারুক। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কারখানা থেকে চা খেতে বের হলে মুরাদপুর এলাকায় বুকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এ সময় কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে তুমুল মারামারি চলছিল। আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে নগরের লালখান বাজারের বাসা থেকে দ্রুত ছুটে আসেন সীমা আকতার। সঙ্গে শ্বশুর মো. দুলালও আসেন হাসপাতালে। তারা ফারুকের লাশের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এসময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে চাইলে সীমা আকতার বলেন, ‘ছবি তুলে কী করবেন। প্রশাসন চাইলে কি এসব বন্ধ করতে পারত না? আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলে–মেয়েরা এখনো জানে না, তাদের বাবা নেই। কী বলব তাদের।’ বলতে বলতে ডুকড়ে কেঁদে ওঠেন সীমা আকতার।
ফারুকের বাবা দুলাল বলেন, ‘আমার ছেলে সকালে বেরিয়ে বিকেলে ফিরল লাশ হয়ে। এখন আমার নাতি–নাতনিদের কি বলব।’
ফারুক ও সীমা আকতারের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ফাহিম বাগমনিরাম সিটি করপোরেশন উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। মেয়ে ফাহিমা বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেজি শ্রেণির ছাত্রী।
চমেক হাসপাতালে বিকেল চারটা থেকে আহতরা আসতে শুরু করেন। রাত ৮টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অর্ধশতাধিক আহত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত বলে হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক নুরুল আলম জানান। এ পর্যন্ত তিনজন মারা যান।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ