নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি প্রচারের শেষ সময় চলে এসেছে। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে প্রচার। ভোট হবে আগামী সোমবার (৭ জানুয়ারি)। প্রচারের শেষ সময়ে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। থেমে নেই তাদের কর্মী ও সমর্থকরা।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনে হেভিওয়েট থেকে শুরু করে তুলনামূলক কম পরিচিত প্রার্থী-সবাই নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে সাধ্যমতো প্রচারের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ভোটারের মন জয়ে তুলে ধরছেন সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি। স্বতন্ত্র ও অন্য দলের প্রার্থীরা এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরে নির্বাচিত হলে সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন। প্রচার কৌশলে ভিন্নতা থাকলেও সব প্রার্থী একটি জায়গায় এসে একাট্টা। তা হলো-কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। তাই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিতে উৎসাহিত করছেন ভোটারদের।
আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনে ১১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপিসহ সমমনা বেশকিছু দল নির্বাচনে না এলেও ভোটের হাওয়ায় প্রবল উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন প্রতীকের পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীসহ উপজেলা ও পৌরসভা এলাকা। সেই সঙ্গে গানের মন ভোলানো ছন্দময় শব্দ কথা আর প্যারোডিতে চলছে প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচার।
এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামে ১৬ আসনে মোট ভোটার ৬৩ লাখ ৯৬৪ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ৬২ জন এবং নারী ভোটার ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯০২ জন। প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে মূল ফ্যাক্টর হবে ছয় লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৯ জন নতুন ভোটার। এই নতুন ভোটারদের গোপন ব্যালটই প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের ভাগ্য নির্ধারণ হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিগত কয়েকটি নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও ভোট বিরোধী অপপ্রচার ঠেকিয়ে নতুন ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করাকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে অভিজ্ঞমহল। তাদের ভাষ্য, বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ভোট কেন্দ্রে না যেতে উৎসাহিত করছে ভোটারদের। লিফলেট বিতরণসহ করছেন প্রচার। সেই সঙ্গে রয়েছে স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীদের সহিংস কর্মকাণ্ডের ভীতি। এই অবস্থায় নবীন ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে পারাই হবে নির্বাচনের বড় সফলতা।
কথা হয় চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ শিক্ষার্থী আরমান আলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে অনেক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নেই। যতদূর বুঝতে পারছি তা হলো এই নির্বাচনটা মূলত আওয়ামী লীগের নেতারাই স্বতন্ত্র ও নৌকার ব্যানারে বিভক্ত হয়ে প্রার্থী হয়েছে। আমি এবারের নির্বাচনে জীবনের প্রথম ভোটার বলে ভোট দিতে যাব।’
চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী শায়লা আকতার বলেন, ‘ছোটবেলায় ভোট উৎসব দেখেছি। এখন তা নেই। তবে আমি এবার নতুন ভোটার হয়েছি। নির্বাচনের দিন পরিবেশ ভালো থাকলে ভোট দিতে যাব। কেন্দ্র কোনো ঝামেলা চাই না।’
নগরীর পাথরঘাটা এলাকার বাসিন্দা বিপ্লব ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘আমি আমার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। আমি মনে করি, এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট প্রয়োগ আমার মতো প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ উৎসবমূখর ভোটের পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ।’
দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর মাইজপাড়া এলাকার বয়োবৃদ্ধ নারায়ণ চন্দ্র দাশ বলেন, ‘আগে রিকশা চালাতাম। এখন শরীরে কুলায় না। ছেলে মাস্টার্স পাস করেছে। অনেকের কাছে গিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। এখানে কোনো মাতৃসদন কিংবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। এলাকার উন্নয়ন তেমন একটা হয়নি। কেটলি প্রতীকের সুমন এমপি লতিফের সঙ্গে সমান লড়াই হবে।’
তবে বিএনপি বা সমমনা দলগুলো নির্বাচনে না আসায় নতুন ভোটারদের ভোট দানে কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। তাদের ভাষ্য, নতুন প্রজন্ম আগুন সন্ত্রাস বা নৈরাজ্য দেখতে চায় না। তারা বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে জীবনের প্রথম ভোট যোগ্য প্রার্থীর পক্ষে প্রয়োগ করবে বলে বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগের ইশতেহারেও নতুন ভোটারদের জন্য কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের উপস্থিতিতে প্রধান টার্গেট জীবনে প্রথম ভোটার হওয়া তরুণরা। এই তরুণদের ভোটে নিয়ে আসতে পারলে অনেক সফল হবে প্রার্থীরা।
ইট-পাথরের নগর নয়, ঐতিহ্যগতভাবে গাছগাছালি ও পাহাড় ঘেরা এই শহরকে রক্ষা করার আবেদন জানিয়ে চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘এই নৌকা বাংলাদেশ এনেছে, এই নৌকা স্মার্ট বাংলাদেশ আনবে। আমাকে নয়, শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীককে ভোট দিন।’
চট্টগ্রাম-১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম বলেন, ‘মানবসেবার অংশ হিসেবে আমি সংসদ সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। আমি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহযোগী হতে চাই। বেকারদের কর্মসংস্থান করে দিতে চাই। আমাকে ফুলকপি প্রতীকে ভোট দিন। নির্বাচিত হলে চট্টগ্রাম-১০ এলাকার রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা সংস্কারে অগ্রাধিকার দেব। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন সবুজ এলাকায় পরিণত করবো। সর্বসাধারনের চলাচলের সুবিধার্থে সড়কবাতির ব্যবস্থা করা হবে। এলাকাবাসীর সুখ-শান্তি ও নিরাপদ জীবন ব্যবস্থায় আমি সচেষ্ট থাকবো।’
চট্টগ্রাম-১১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক সুমন বলছেন, ‘রাজনীতি থেকে আমার আর কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি সাধারণ মানুষের সেবা করতে চাই। নির্বাচিত হলে বেকারদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করবেন করবো।’
চাটগাঁ নিউজ/এসএ