মোহাম্মদ ইলিয়াছ, বান্দরবান প্রতিনিধি: উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে অনাস্থাপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য এবং অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের সাথে সমঝোতা করার জন্য ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ইউপি সদস্যরা। যেখানে তাদের অভিযোগ পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম, সরকার দলীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ উপজেলার কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতাদের প্রতি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন ইউপি সদস্য যারা গত (১৭ এপ্রিল) বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল হোসাইনের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অনাস্থাপত্র জমা দিয়েছিলেন।
আরো পড়ুন >> ফাঁসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা
ইউপি সদস্যরা আরো জানায়, এই উদ্দেশ্যে (২২ এপ্রিল) সোমবার বেলা ২ টায় লামা পৌরসভার হলরুমে একটি মিটিংও ডাকা হয়েছে। সেখানে নাকি আমাদের সমঝোতায় আসতেই হবে এবং অনাস্থাপত্র প্রত্যাহার করার জন্য স্বাক্ষরও করতে হবে। না হয় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ইউপি সদস্য জানায়, আমরা সমঝোতা করলে, চেয়ারম্যান যে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে তার তো বিচার হবেনা। সুতরাং আমরা কোন সমঝোতা চাইনা।
অন্য এক ইউপি সদস্য বলেন, আমাদেরকে বিভিন্ন মাধ্যমে টাকার অফারও করা হচ্ছে। অনাস্থাপত্র তোলে ফেললে পরে আমাদের অন্যদিকে ফাঁসাতেও পারে। তাই চেয়ারম্যানের সাথে কোন সমঝোতা নয়।
সমঝোতা ও চাপ প্রয়োগের বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলামের সাথে মুটোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি উল্টো ক্ষেপে যান এবং বিষয়গুলো অস্বীকার করেন। পরে মোবাইলে কথা না বলে সামনা সামনি কথা বলার জন্য বলে ফোন কেটে দেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে পত্র পেলে সে মোতাবেক পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে বিগত (১৭ এপ্রিল) বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল হোসাইনের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে তারা অনাস্থাপত্র জমা দিয়েছিলেন ১২ ইউপি সদস্য।
অভিযোগে তারা (ইউপি সদস্যরা) বিগত তিন বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের ২শ ৫০ মে. টন চাল ও গম আত্মসাৎ, টাকার বিনিময়ো রোহিঙ্গাদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া, মুজিব শতবর্ষের উপহারের ঘর দেওয়ার বিপরীতে বরাদ্ধপ্রাপ্ত ব্যক্তির থেকে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎসহ ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করা এবং তাদের তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করেন।
তখন চাটগাঁ নিউজসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিউজ প্রকাশিত হয় এবং সমালোচনার মুখে পড়ে ফাঁসিয়াখালীর এই চেয়ারম্যান। সরকার দলীয় হওয়ায় চেয়ারম্যান নুরুল হোসাইন তখন সহযোগিতার জন্য লামা উপজেলা আওয়ামীলীগের দ্বারস্থ হয়। জানা গেছে, সেই সুবাদে সমঝোতা করার দ্বায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় লামা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলামসহ লামার কয়েকজন প্রভাবশালী চেয়ারম্যান। যদিও বিষয়টি তারা উভয়েই অস্বীকার করেছেন।