নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম নগরীর মাদারবাড়ির এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছার রমজান এলেই শঙ্কায় থাকেন। তিনি বলেন, ‘রমজানে অনেক দেশে দ্রব্যমূল্য কমে যায়। কিন্তু ব্যতিক্রম এদেশে। রমজান এলেই যেন সারাবছরের ব্যবসা এক মাসেই সেরে ফেলার প্রতিযোগিতায় নামে ব্যবসায়ীরা। নুন থেকে চিনি, তেল থেকে জল সব জিনিসের দাম বেড়ে যায়। কোন কিছুতে হাত দেওয়া যায় না। এর মধ্যে রমজান আসছে। ব্যবসায়ীরা এ সময় প্রতিটি পণ্যের দাম কয়েক গুণ বাড়ায়। এবার যে কী হারে বাড়বে তা ভেবেই দুশ্চিন্তা হচ্ছে।’ এমন আশঙ্কা অনেক মানুষের।
রমজান সামনে রেখে চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, ছোলা, খেজুর ভয় ধরাচ্ছে সবাইকে। আগাম প্রস্তুতি নিয়ে আমদানিকারক, ব্যবসায়ীরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও নিজেরাই আশ্বস্ত হতে পারছেন না। আগের মতো অসাধু ব্যবসায়ীদের লোভাতুর রূপ দেখতে হবে— এই আশঙ্কা সাধারণ মানুষের।
এদিকে, রমজান সামনে রেখে রেকর্ড পরিমাণ চিনি, ভোজ্যতেল, ছোলা ও পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ ভোজ্যতেল, ৪৮ শতাংশ চিনি এবং ১০২ শতাংশ বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে। তবে আমদানিকারকেরা বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের আমদানি স্বাভাবিক থাকার কথা জানালেও ভরসা পাচ্ছে না মানুষ।
কারণ দেশে সিন্ডিকেটের কারসাজি নতুন নয়। গত কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমশই লাগামহীন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান তারা।
চট্টগ্রাম নগরীর একটি বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক আফসানা খানম নূরী বলেন, এবার প্রায় সব ধরনের জিনিসপত্রের দাম আগের চেয়ে বেশি। অথচ আয় বাড়েনি। রমজানে প্রতিবছর ভোগ্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায়। বাজারে হাজার টাকা নিয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় অর্ধেক জিনিস না কিনেই ঘরে ফিরতে হয়। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রা কঠিন হয়ে গেছে।
একই অভিমত সব শ্রেণিপেশার লোকজনের। তারা জানান, সরকারি সুবিধা নিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করে যাতে সংকট না হয় এবং বাজার দর স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু যে লাউ সেই কদু। পণ্য সংকট না থাকলেও কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রাতারাতি বাজার অস্থির করে তুলে একশ্রেণি অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
তবে, দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে, রমজানের জন্য আমদানি করা ভোগ্যপণ্য বিপুল পরিমাণে মজুদ আছে। তেল,চিনি, ছোলা ও পেঁয়াজের আমদানি বেড়েছে কয়েকগুণ। বাজার দর সহনীয় থাকবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, পর্যন্ত গত সাড়ে তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭০৭ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছে। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৮০ হাজার ২১২ মেট্রিক টন। এবার ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৮৬ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে। গত বছর একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৩ দশমিক ৭৩ মেট্রিক টন।
এবার ছোলা আমদানি হয়েছে ৪৯ হাজার ৫১৫ দশমিক ৯৭ মেট্রিক টন। আগের বছর একই সময়ে ২৪ হাজার ৪৮৬ দশমিক ৮১ মেট্রিক টন ছোলা আমদানি করা হয়। এ ছাড়া গত সাড়ে তিন মাসে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮১ টন। এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় এবার ৪১ হাজার ৮৪০ টন পেঁয়াজ বেশি আমদানি হয়েছে।
কাস্টমসের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের চেয়ে এবার ৪৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ চিনি, ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ ভোজ্যতেল, ১০২ দশমিক ২১ শতাংশ ছোলা এবং প্রায় ৫৪ শতাংশ পেঁয়াজ বেশি আমদানি হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার জানান, বেসরকারি অফডকগুলোয় যখন আমদানি করা পণ্যগুলো আসছে তখন আমরা খুব দ্রুত এই পণ্যগুলো ডেলিভারি দিয়ে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমদানিকারকরাও দ্রুত ডেলিভারি নিয়ে নিচ্ছেন। যাতে বাজারে নিত্যপণ্যের সংকট না হয়।
রমজান ঘিরে পণ্য আমদানির বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে যারা পণ্য আমদানি করছেন, তাদের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সেসব পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
প্রতি বছরই রমজান শুরুর পর জেলা প্রশাসন বাজার তদারকি করে। তার আগেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে শত কোটি টাকা লুটে নেয় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। তাই চলতি বছর আগে-ভাগেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান বলেন, রমজান সামনে রেখে কী পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হচ্ছে আমাদের কাছে তথ্য আছে। আমরা নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং করব।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ