রাঙ্গুনিয়ায় ৬০ শতাংশের বেশি ভোট সংগ্রহ

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী আংশিক) আসনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে। সকাল থেকেই ভোটারের উপস্থিতির পাশাপাশি কেন্দ্রে কেন্দ্রে ছিলো উৎসবের আমেজ।

রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এই চিত্র দেখা গেছে। ভোট গ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এই আসন থেকে পুনরায় বিজয়ী হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। এবার বিজয়ী হলে এই আসন থেকে তিনি পর পর চতুর্থবারের মতো জয়ী হবেন।

এদিন সকাল ১০টার দিকে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মধ্য নোয়াগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে, মোট ২৮৯০ ভোটের মধ্যে ৩৮৪ ভোট সংগৃহীত হয়েছে। বিকাল ৩টার দিকেও কেন্দ্রটিতে দীর্ঘ লাইন ছিলো। ভোট গ্রহণ শেষে কেন্দ্রটিতে ৭০ শতাংশ ভোট সংগৃহীত হয়েছে বলে কেন্দ্রটির দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর জালাল উদ্দীন জানান, ‘ভোর সকাল থেকেই কেন্দ্রে ভোটাররা এসেছেন। দিনব্যাপী সুশৃঙ্খল এবং উৎসবমুখর পরিবেশে চলেছে ভোটগ্রহণ। এলাকাবাসী কোন গুজবে কান না দিয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে হাসিমুখে ভোট দিতে পেরেছেন।’

এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুখবিলাস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এরপর বিকাল ৩টা পর্যন্ত তিনি পদুয়া, শিলক, সরফভাটা, পৌরসভাসহ উত্তর রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন তিনি।

সরেজমিনে উপজেলার রাজানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, লালানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মজুমদারখীল উচ্চ বিদ্যালয়, আলমশাহপাড়া মাদ্রাসা, উত্তর রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদ, রাজারহাট কেন্দ্র, রাজানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাণীরহাট আর এ বিএম উচ্চ বিদ্যালয়, রাণীরহাট আল আমিন মাদ্রাসা, হাজী ইব্রাহিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিলো। প্রতিটি কেন্দ্রে নৌকা ছাড়াও চেয়ার, সোনালী আঁশ, লাঙ্গল, মোমবাতি এবং একতারা প্রতীকের এজেন্টও বসতে দেখা গেছে। এসব কেন্দ্রে সকাল ১১টা পর্যন্ত প্রায় ১০ শতাংশের উপর ভোট কাস্টিং হয়েছে। দিনভর অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা ছাড়াই শেষ হয়েছে ভোট গ্রহণ। প্রায় প্রতিটি এলাকায় নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝুলানো নেতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি অবস্থান করে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার কাজ করতে দেখা গেছে।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে কথা হয় লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী মুছা আহমেদ রানার সাথে। তিনি জানান, এজেন্ট বসতে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট চলছে। এই ভোটে তিনি পরাজিত হলেও মেনে নেবেন বলে জানান।

এদিকে চলমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী আংশিক) আসনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান মেহবুব। বিকাল চারটার দিকে তিনি জানান, যতটুকু খবর পেয়েছি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭ শতাংশের উপর ভোট কাস্টিং হয়েছে। সম্ভবত তা ৬০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

সুত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-৭ আসনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ড. হাছান মাহমুদের সাথে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ইসলামী ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ ইকবাল হাছান (মোমবাতি), জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব সংহতি চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাবেক সদস্য সচিব মুসা আহমেদ রানা (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপি থেকে মনোনীত প্রার্থী খোরশেদ আলম (সোনালী আঁশ), ইসলামিক ফ্রন্টের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সাধারণ সস্পাদক আহমদ রেজা (চেয়ার), সুপ্রিম পার্টি রাঙ্গুনিয়া উপজেলা শাখার কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদ আলম (একতারা)।

এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯১ জন। তারমধ্য রাঙ্গুনিয়ার ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭১৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৭ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৮ জন। অন্যদিকে বোয়ালখালী আংশিক ১টি ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১৮ হাজার ৩৭৬ জন। তারমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ হাজার ৭৪৩ এবং নারী ভোটার ছিলো ৮ হাজার ৬৩৩ জন।

রাঙ্গুনিয়ায় ৯৫টি এবং বোয়ালখালী আংশিক অংশে ৮টিসহ মোট ১০৩টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। যেখানে ১০৩ জন প্রিজাইডিং অফিসার এবং ৬২১ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও ১ হাজার ২৪২ জন পোলিং অফিসার কাজ করছেন। মাঠে ৪ জনএক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, ২ জন জুডিশিয়াল মাজিস্ট্রেট, ৪ প্লাটুন বিজিবি এবং ২ প্লাটুন সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করেছেন। এর বাইরে র‍্যাব, পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা প্রতিটি কেন্দ্রে দায়িত্বে ছিলো।

Scroll to Top