রাঙ্গুনিয়ায় অনুমোদনহীন অর্ধশত বেকারী

নোংরা পরিবেশে চলছে খাদ্য তৈরি

জগলুল হুদা (রাঙ্গুনিয়া) : এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত উপকরণ ও বানানো বেকারি পণ্য। এসবের পাশ দিয়ে হাটাহাটি করছেন খাদ্য উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা। উম্মুক্ত খাদ্যে ঝড়ে পড়ছে তাদের ঘাম। আটা-ময়দা প্রক্রিয়াজাত করার কড়াইগুলোও অপরিষ্কার। ডালডা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ক্রিম। আর তার পাত্রগুলোতে ভন ভন করছে মাছি। কয়েক দিনের পুরোনো তেলেই ভাজা হচ্ছে খাবার। ময়লা হাতেই প্যাকেট করা হচ্ছে খাবারগুলো। আর তাতে তেলাপোকারা হাটছে উৎপাদিত এসব খাদ্য একটু চেটে দেখতে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের রাজারহাট চৌরাস্তা মাথার দয়াল বেকারিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।  শুধু এই বেকারিতেই নয়, রাঙ্গুনিয়ার অর্ধ শতাধিক বেকারি ও মিষ্টি কারখানায় অনুমোদন ছাড়াই খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। কোনো রকমের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ছাড়াই  এসব খাদ্যসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশরই বিএসটিআই’র অনুমোদন ও পরিবেশের কোনো ছাড়পত্র নেই। শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে চলছে। তবে দু’একটি বেকারি ও মিষ্টি কারখানায় লাইসেন্স থাকলেও কাগজপত্র নবায়ন করা হয়নি তাদের। এসব অবৈধ কারখানা চালু থাকায় এ খাত থেকে সরকার প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।

আরো জানা যায়, উপজেলার রাজানগর, দক্ষিন রাজানগর, ইসলামপুর, লালানগর, পারুয়া, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, মরিয়মনগর, চন্দ্রঘোনা, পদুয়া রাজারহাট, রোয়াজারহাট, কাদেরনগর, সরফভাটা, পোমরা, শান্তিরহাট, বেতাগি সহ বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক বেকারি ও মিষ্টি কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে খাদ্য তৈরিতে প্রতি মাসে শতশত মন জ্বালানি কাঠ (লাকড়ি) পোড়ানো হচ্ছে।

পদুয়া ইউনিয়নের রাজারহাট বাজারের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, রাজারহাট বাজারে ঢাকা সুপার বেকারি, মেসার্স কে.জি.এন বেকারি সহ একাধিক অবৈধ মিষ্টি কারখানা গড়ে উঠেছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের উপাদান দিয়ে তৈরি হচ্ছে মানহীন বাহারি খাদ্যপণ্য। এসব খাবার খেয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।

দক্ষিণ রাজানগরের সিএনজি অটোরিক্সা চালক করিম গণি বলেন, অনুমোদন ছাড়াই দয়াল বেকারিতে নোংরা পরিবেশে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোড়কে পেটিস, কেক, বিস্কুট, পাউরুটিসহ মুখরোচক নানা খাবার তৈরী করে বাজারজাত করছে।

মরিয়মনগর ইউনিয়নের চৌমুহনী এলাকার কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক ঘেঁষে ‘ইয়াসিন মিষ্টি ভান্ডার’ নামে একটি কারখানা সরকারী অনুমোদন ছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রসমলাই, মিষ্টি, জিলাপি, নিমকি সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি হচ্ছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিষ্টি কারখানার ব্যাপারে সর্তক করলেও এখনো অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।

গোডাউন কাদেরনগর এলাকায় গড়ে উঠা বেকারিতে খাদ্য তৈরি করার চুল্লির কালো ধোঁয়া পুরো এলাকায় পরিবেশ নষ্ট করছে। শিশু-কিশোর শ্রমিক দিয়ে বেকারি পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

তবে এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন বেকারি মালিকের বক্তব্য নেয়ার চেষ্ঠা করলে তারা কেউ বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ রুবেল বলেন, সাধারণ মানুষ নিম্নমানের খাদ্যপণ্য খেয়ে পেটের পীড়াসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে শিশু-কিশোররা। ক্ষতিকারক নিষিদ্ধ কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি বেকারি পণ্য খেলে ক্যানসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মো. আবুল হোসেন বলেন, অনুমোদনহীন বেকারি ও মিষ্টি কারখানা পরিদর্শন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top