ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে শিশুকে হত্যা, আসামির মৃত্যুদণ্ড

রাঙামাটি প্রতিনিধি : রাঙামাটিতে এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে হত্যাকারী অংবাচিং মার্মাকে (৪৬) মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাঙামাটির নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ.ই.এম. ইসমাইল হোসেন এর আদালত আসামি ও ভিকটিমের পিতা-মাতাসহ আইনজীবী, পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে এই রায়ের আদেশ প্রদান করেন।

প্রথমবারের মতো রাঙামাটিতে এই ধরনের মামলায় ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। এদিকে এই প্রথমবারের মতো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক শিশু নির্যাতন ও হত্যাকারি আসামীর ফাঁসির রায়ে একই সাথে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম অভি ও আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ মামুন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ এজলাশে রায় ঘোষণার পূর্বে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিজে লিখিত বিবরণে উল্লেখ করেন, রাঙামাটির চন্দ্রঘোনা থানাধীন ২নং রাইখালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পূূর্ব কোদালা এলাকার বাসিন্দা সাথুই অং মার্মার ৯ বছর বয়সী তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী শিশু কন্যা মিতালী মার্মাকে স্থানীয় শিক্ষক অংবাচিং মার্মা প্রকাশ আবাসু প্রকাশ বামং এর কাছে প্রাইভেট পড়াতে দেন। ঘটনার দিন ২০১৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ভিকটিম প্রাইভেট পড়াতে পাঠালে অন্য শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে ভিকটিম শিক্ষার্থী মিতালী মার্মাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টাকালে সে চিৎকার করতে থাকে। তখন ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে গলায় সুতলি ও কাপড় পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

পরে মরদেহ বস্তায় ভরে ঘরের মাচায় তুলে রাখে হত্যাকারী শিক্ষক অংবাচিং মার্মা। এদিকে ভিকটিমের পরিবার তাকে খুঁজতে আসলে তাকে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট পড়িয়ে ছুটি দিয়ে দিয়েছে বলে শিক্ষক অংবাচিং মার্মা জানালেও তার কথায় সকলের সন্দেহ হয়। পরবর্তীতে আসামিকে নজরদারিতে রাখে এলাকাবাসী। ৩রা ফেব্রুয়ারিতে ভোর ৪টার সময় বস্তায় ভরে ভিকটিমের মরদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় আসামিকে হাতেনাতে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করে স্থানীয়রা।

এই ঘটনায় ভিকটিমের পিতা বাদি হয়ে চন্দ্রঘোনা থানায় অংবাচিং মার্মাকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(২) ও তৎসহ পেনাল কোড ১৮৬০ এর ২০১ ধারায় ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নাম্বার-০১। এই মামলায় একই বছরের আগস্টের ৫ তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(৪)(খ) ও তৎসহ পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২ ও ২১০ ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করে চন্দ্রঘোনা থানা পুলিশ। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি উক্ত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

এদিকে মামলার রায় সমাজের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবং ভিকটিমের পরিবার ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম অভি।

অপরদিকে, এই মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে সমাজের প্রতি একটি ম্যাসেজ যাবে এবং এসকল ক্ষেত্রে সকলের মাঝে সচেনতা বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, আমি একজন আইনজীবী হিসেবে আসামির পক্ষে দাঁড়াবো এটাই স্বাভাবিক। আসামি দরিদ্র হওয়ায় জাতীয় আইন সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে আমি তার পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আসামির স্বজনরা যদি চায় এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার চেষ্টা করবো।

রাঙামাটিতে সেশনজট ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের পর এবারই প্রথমবারের মতো শিশু নির্যাতনকারী ও হত্যাকারী আসামিকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ.ই.এম. ইসমাইল হোসেন। ইতোপূর্বে এই ট্রাইব্যুনাল চাঞ্চল্যকর বেশ কয়েকটি ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতন মামলার সর্বোচ্চ সাজার রায় ঘোষণা করেছেন।

চাটগাঁ নিউজ/আলমগীর/এআইকে

Scroll to Top