রাউজান প্রতিনিধি: বিরামহীন ঢোলের আওয়াজের সঙ্গে থেমে থেমে বেজে উঠছে ঘণ্টা আর কাঁসার শব্দ আর নানা বয়সের নারীদের ভক্তিভরা উলুধ্বনি। এরই মাঝে পিতার কোলে চড়ে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হলেন ‘কুমারী মা’। হাজারো ভক্ত জয়ধ্বনি দিয়ে বরণ করে নেন ‘কুমারী মা’ কে।
রবিবার (২২ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীতে বেলা ১২ টায় রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নে দক্ষিণ রাউজান কেন্দ্রীয় গঙ্গা মন্দিরের পূজা মণ্ডপে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে।
এবার মায়ের আসন অলঙ্কৃত করেন চন্দন আচার্য্য ও রেশমি আচার্য্য দম্পতির ৯ বছর বয়সী কন্যা অনুষ্কা আচার্য্য। শাস্ত্রমতে, এদিন তার নামকরণ করা হয় ‘কালসন্দর্ভা’। গতবছরও মায়ের আসন অলঙ্কৃত করেন চন্দন আচার্য্য ও রেশমি আচার্য্য দম্পতির বড় কন্যা ত্রিপন্না আচার্য্য।
শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীতে বৈচিত্র্যময় আরাধনার এক বর্ণাঢ্য পর্ব এই কুমারী পূজা। মাতৃভাবে কুমারী কন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগজ্জননীর উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করাই কুমারী পূজা। ভক্তদের মতে, এটি একাধারে ঈশ্বরের উপাসনা, মানববন্দনা আর নারীর মর্যাদার প্রতিষ্ঠা। নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর ঈশ্বর আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা।
এই কুমারী পূজাকে ঘিরে রাউজান বিভিন্ন এলাকাসহ আশেপাশের উপজেলা ও চট্টগ্রাম মহানগর হতে পূজার্থীরা গঙ্গা মন্দিরের মণ্ডপস্থলে ভিড় করেন। তারা পূজা-অর্চনা, প্রার্থনাসহ নানান ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করেন। ভোগ আরতি শেষে কুমারী পূজায় আগত সকল পূজার্থীদের মাঝে অন্নপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।
গঙ্গা মন্দিরের প্রধান পুরো আশুতোষ চক্রবর্তী পরিচালনায় কুমারি পূজায় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণ রাউজান পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রকাশ সরকার, সাধারণ সম্পাদক ম্যালকম চক্রবর্তী, দক্ষিণ রাউজান জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি চন্দন কুমার বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, অজিত বিশ্বাস, রুবেল বৈদ প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এবার শারদীয় দূর্গোৎসবে চট্টগ্রামে রাউজানে সর্বাধিক ২৩৩ মণ্ডপে শান্তিপূর্ণভাবে সার্বজনীন প্রতীমা পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলার উত্তরাংশে ১৩১ টি এবং দক্ষিণাংশে ১০২টি। এছাড়াও ২১ টি ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলার ২৩৩ টি মণ্ডপের মধ্যে একমাত্র দক্ষিণ রাউজান কেন্দ্রীয় গঙ্গা মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা। যা বিগত কয়েকবছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে।