মোজাম্বিকে ব্যাপক লুটপাটের শিকার বাংলাদেশিরা

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে সাম্প্রতিক নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। গত ৯ অক্টোবর দেশটির সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করার পর সেখানে এখন পর্যন্ত ২১ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

বিরোধী দলের নেতৃত্বে বিক্ষুব্ধ জনতা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাট চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীরা। বিশেষ করে বিদেশি মালিকানাধীন দোকানগুলো তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।

দেশটিতে থাকা প্রবাসীরা বলছেন, দেশটির রাজধানী মাপুতুর বেশিরভাগ দোকান লুটপাটের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আলতো মুলুক নামের একটি জায়গায় বাংলাদেশি, পাকিস্তানি ও ভারতীয়দের বাসা-বাড়িতেও হামলা চালানো হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার বাসিন্দা নাসির উদ্দীন সাইফ দীর্ঘদিন ধরে মোজাম্বিকে ব্যবসা করছেন। সেই লুটপাটের পরবর্তী পরিস্থিতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরে দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এই প্রবাসী। তিনি জানান, মোজাম্বিকের সাধারণ জনগণের মধ্যে বিদেশিদের প্রতি ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি এই ক্ষোভের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সাইফ আরও জানান, মোজাম্বিকে বাংলাদেশের কোনো সরাসরি দূতাবাস নেই। পূর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মোজাম্বিকের কনস্যুলার সেবা প্রদান করা হতো, যা বর্তমানে পর্তুগালে স্থানান্তর হয়েছে। ফলে বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দূতাবাস থেকে তাৎক্ষণিক কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে মোজাম্বিকের স্বাধীনতার পর থেকে ফ্রেলিমো পার্টি দেশটি শাসন করে আসছে। এই প্রথম কোনো বেসামরিক দল ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। পোডেমোস নামের বিরোধী দল এবং তাদের নেতা ভেনাসিও মন্ডলেন ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে এবং নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে জনগণকে সংগঠিত করছেন। অক্টোবরে প্রাথমিক নির্বাচনের ফলাফলের পর কিছু সহিংসতা হলেও ২৩ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পর যে মাত্রার সহিংসতা শুরু হয়েছে, তা নজিরবিহীন।

জানা গেছে, অনেক পুলিশ সদস্যও ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ বিরোধী দলে যোগ দিয়ে লুটপাটে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। কিছু জায়গায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও তারা গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। বেশ কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

আলজাজিরা ও এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর মোজাম্বিকে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ এবং প্রাদেশিক সংসদ নির্বাচনের জন্য সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবিধানিক পরিষদ ক্ষমতাসীন ফ্রেলিমো দলের সমর্থিত প্রার্থী ড্যানিয়েল চ্যাপোকে ৬৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী ঘোষণা করে। তবে রেনামো দলের নেতা ওসুফো মোমাদে অনিয়মের অভিযোগ এনে এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মোজাম্বিকে চরম রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বিরাজ করছে।

মোজাম্বিকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাসকোল রোন্ডা বলেন, ‘নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার পরে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ভেনাসিও মন্ডলেনের নেতৃত্বে বিরোধী বাহিনী ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। এতে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছে।’

মোজাম্বিকের চলমান পরিস্থিতিতে সেখানকার বাংলাদেশিদের অবস্থা সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আফ্রিকা) বি এম জামাল জানান, সেখানে বাংলাদেশিদের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট ভাঙচুর-লুটপাট করা হয়েছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ

Scroll to Top