মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে বাবার মৃত্যুদণ্ড

সিপ্লাস ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা থানায় দায়ের হওয়া একটি ধর্ষণ মামলায় ভুক্তভোগী শিশুর বাবা মো. নাছির উদ্দিন মোল্লাকে (৩৫) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা এই রায় ঘোষণা করেন।

এসময় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নাছির মোল্লাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণা শেষে সাজা পরোয়ানামূলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নাছির মোল্লা ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানার পশ্চিম শৌলজালিয়া এলাকার মৃত জলিল মোল্লার ছেলে। তিনি নগরের উত্তর পতেঙ্গা ডেবার পাড় হাউজিং কলোনি রোড মনছুরের ভাড়া ঘরে বসবাস করতেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগীরা দুই বোন। তাদের মা নগরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ২০২১ সালে ২৫ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত  মায়ের অনুপস্থিতিতে ভুক্তভোগীকে আসামি নাছির মোল্লা একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২০ এপ্রিল ভুক্তভোগীর মা চাকরির উদ্দেশ্যে চলে যায়। ওই সময় আসামি ভুক্তভোগী ডেকে বলেন, তার ব্যবহৃত মোবাইলটা চার্জে লাগিয়ে দিতে। চার্জে থাকা মোবাইলটি আনতে গেলে বাবা হাত ধরে টান দিয়ে নগরের পতেঙ্গা মডেল থানার উত্তর পতেঙ্গা হাউজিং কলোনি রোড ডেবার পাড় মনছুরের বিল্ডিংয়ের ২য় তলার বাসায় ভুক্তভোগীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে।

এ ঘটনায় ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল নাছির মোল্লার বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু হয়। আলোচিত মামলাটির তদন্ত শেষে ওই বছরের ২৪ জুন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। এরপর বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদালতে আসামির বিরুদ্ধে ৮ জন সাক্ষ্য প্রদান করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ভুক্তভোগী মায়ের সঙ্গে আসামির নাছির মোল্লার ২০০৬ সালে প্রথম বিয়ে হয়। এরপর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। মাঝখানে ভুক্তভোগীর মায়ের একাধিক স্বামীর সঙ্গে বিয়ে হয়। ২০১৯ সালে ভুক্তভোগীর মায়ের সঙ্গে আসামির পুনরায় বিয়ে হয়। একারণে সাফাই সাক্ষ্যতে আসামি ভুক্তভোগী  নিজের কন্যাসন্তান নয় বলে বারবার দাবি করছিলেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনএ টেস্টে আসামি এবং ভুক্তভোগী পিতা-কন্যা বলে প্রমাণিত হয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে যা বললেন আদালত-

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর ৯(১) ধারা অনুযায়ী ধর্ষণের অপরাধের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ড। ১২ বছর বয়সী ভুক্তভোগী শিশু লামিয়া আক্তার মোহাম্মদ নাছির মোল্লার ঔরসজাত কন্যা হওয়া সত্ত্বেও সজ্ঞানে সুস্থ মস্তিষ্কে তাকে ধর্ষণ করেন এবং ভুক্তভোগীকে নিজের কন্যা হিসেবে অস্বীকার করেন। পিতা দ্বারা ধর্ষণের ফলে শিশু ভুক্তভোগী পৃথিবীর সকল পুরুষের প্রতি ক্ষোভ এবং অবিশ্বাস সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যার কারণে তার স্বাভাবিক জীবন যাপন ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। সর্বোপরি শুধু বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবীতে পিতা ও কন্যার সম্পর্ক পবিত্র এবং শাশ্বত। কন্যা তার পিতার নিকট সর্বাধিক নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয। আসামি তার কন্যাকে ধর্ষণ করে শাশ্বত পবিত্র এই সম্পর্ককে কলুষিত করেছেন এবং পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধন ও আস্থার বিশ্বাসে আঘাত করেছেন। ফলে আসামিকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান করা সমীচীন হবে বিবেচনায় তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।

Scroll to Top