নিজস্ব প্রতিবেদক : শাহাদাত হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত সাগরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে- হাতে লাঠি নিয়ে ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’ গান গাইতে থাকা মুখে চাপদাঁড়ি, পরনে খয়েরি টিশার্ট ও কালো জিন্স পরা সেই যুবকই ‘সাগর’ বলে নিশ্চিত করেছেন নিহতের স্ত্রী শারমিন। সম্প্রতি শারমিন অপরাধীদের চিহ্নিত করে গণমাধ্যমের কাছে ঘটনার নেপথ্য কারণ বর্ণনা করেছেন।
তবে এখনো পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মো. আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, আসামিদের শনাক্তে পুলিশি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ চলছে। তবে এখনো নির্ভরশীল তথ্য পাওয়া যায়নি। গভীর রাতের ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, এই সাগরের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পাওনা ছিল নিহত শাহাদাতের। এই টাকার জন্যই শাহাদাত হোসেনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করছে পরিবার।
শাহাদাত হোসেনের স্ত্রী শারমিন আক্তার জানান, সাগরের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা পেতেন শাহাদাত। তা নিয়ে দু’জনের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। ১৩ আগস্ট সন্ধ্যায় পাওনা টাকা নিতে ২ নম্বর গেটে যেতে বলে সাগর। এর পর থেকে স্বামী শাহাদাতের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়নি। রাতে দুই দফা ফোন দিয়ে তার স্বামীকে হত্যার হুমকি দেয় সাগর। প্রথম দফায় বলে, ‘তোর জামাই তোর বুকে কেমনে যায় আমি দেখব।’ দ্বিতীয় দফার ফোনে স্বামীকে ফেরত পেতে ৯ হাজার টাকা চায় বলে জানান তিনি। পরদিন সকালে বিভিন্ন থানায় ঘুরে তার স্বামীর খোঁজ নেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফেসবুকে ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করেন তিনি। এর আগে শাহাদাতকে মারধরের ছবিও তার মোবাইলে পাঠায় সাগর।
শারমিন বলেন, ‘সাগর আমার স্বামীর বন্ধু। তার সঙ্গে পাওনা টাকা নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছিল। এর জের ধরে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে খুন করেছে। আমার স্বামীকে মারধরের ভিডিওতে সাগরকেও দেখা যাচ্ছে। আমার সন্তান দুনিয়ায় আসার আগেই বাবাকে হারিয়েছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
শাহাদাত হোসেনের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী থানাধীন পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামে। স্ত্রীকে নিয়ে নগরের কোতোয়ালি থানার বিআরটিসি বয়লার কলোনিতে থাকতেন।
এ ঘটনায় গত ১৫ আগস্ট শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর তাকে নৃশংসভাবে মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ সক্রিয় হয়।
গত ১৪ আগস্ট নগরের প্রবর্তক মোড়ের পাশের একটি বেসরকারি একটি হাসপাতালের সামনে থেকে পুলিশ শাহাদাতের মরদেহটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগী শাহাদাতের চাচা মোহাম্মদ হারুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে কাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সারাদিন পর তার স্ত্রী শারমিন সন্ধ্যার দিকে ফোন করলে তিনি জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় যাবেন। রাত বেশি হওয়ার পরেও শাহাদাত বাসায় না ফেরায় তাকে ফোন করেন শারমিন। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। এর পরদিন শাহাদাতের চাচা সকাল ৯টার দিকে ফেসবুকে দেখেন, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে বদনাশাহ মিয়া (রহ.) মাজারের বিপরীতে সড়কের পাশে তার ভাতিজার মরদেহ পড়ে আছে।
চাটগাঁ নিউজ/ উজ্জ্বল/এসএ