নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় পাহাড় থেকে আমেনা বেগম (৩৫) নামে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআইর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভোর রাতে আমেনাকে তার স্বামী ইয়াসির অপর দুই বন্ধুসহ আনোয়ারার ইকোনমিক জোন এলাকায় নিয়ে গিয়ে মদ ও ইয়াবা খাইয়ে হত্যা করে। আমেনার মাদকাসক্তি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা সাজিয়েছিল স্বামী ইয়াসির। হত্যাকান্ডের পর ইয়াসির মধ্যপ্রাচ্যে পালিয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি, বাঘাইছড়ির বিভিন্ন এলাকায় টানা ৭২ ঘন্টার অভিযান শেষে জড়িত দুই আসামিদেরকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।
বুধবার (২৩ অক্টোবর) তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ দিদারুল ফেরদৌস।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং হাজী পাড়া এলাকার মোহাম্মদ সোলতান আহমেদের ছেলে জাহেদ নাবেদ (৩০) প্রকাশ মো. জাহেদ প্রকাশ নাহিদ ও আনোয়ারা উপজেলার ইরফান (৩২)।
তিন দিনের রিমান্ড শেষে আসামি নাহিদ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (আদালত নং-৫ চট্টগ্রাম) এর বিচারক ফারদিন মুস্তাকিম তাসিনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে গ্রেফতার দুই আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন বলেন, ওই তরুণীর পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ধারণা করেছিলেন আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে মরদেহটি পাহাড়ে ফেলে চলে যায়।
পুলিশ জানায়, নিহত আমেনা বেগম নগরীর বলুয়ার দিঘির পাড় এলাকার আবুল কালাম সওদাগর কলোনির বাসিন্দা কামাল উদ্দিনের মেয়ে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নাগেরকান্দি গ্রামে। আমেনা ইয়াসিরের দ্বিতীয় স্ত্রী। শ্বশুর পক্ষ মেনে না নেয়ায় আমেনা নগরী বাকলিয়া তক্তারপুল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
স্ত্রী আমেনা বেগমকে খুনের পরিকল্পনায় ৩০ সেপ্টেম্বর ইয়াসির আরাফাত দুবাই থেকে দেশে আসেন। দেশে এসে সে আগ্রাবাদে থাকা বন্ধু জাহেদ প্রকাশ নাহিদকে পরিকল্পনার কথা জানায়। । ওইদিন ইয়াসির তার আরেক বন্ধু ইরফানকে নিয়ে নাহিদের আগ্রাবাদের বাসায় আসেন। এই ইরফানের গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা। তার পরদিন ১ অক্টোবর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
পর দিন পহেলা অক্টোবর রাত ১০টার দিকে আমেনা বেগম ইয়াসিরকে ফোন করে আনেন। তারপর ইয়াসিন ও ইরফান আরেক বন্ধুর গাড়িতে করে নগরীর কালামিয়া বাজার যান। তখন নাহিদ ইরফানের বাড়িতেই ছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমেনাসহ দুজন আবার ইরফানের বাসায় ফিরে যান। পরে চার জন মিলে এক সাথে ইয়াবা ও মদ সেবন করেন। রাত ৩টার দিকে তারা প্ল্যান করেন গাড়ি নিয়ে টানেলে ঘুরতে যাবেন। পরে প্ল্যান পরিবর্তন করে সিদ্ধান্ত নেন পাহাড়ে বসে মদ খাবে। ইরফান তাদের আনোয়ারার একটি পাহাড়ে নিয়ে যান। সেখানে যাবার পর ইয়াসিন ও তার স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।
ঝগড়ার এক পর্যায়ে হঠাৎ ইরফান আমেনার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। পরে ইয়াসিন কোমর থেকে একটি ছুরি বের করে আমেনার পেটে ডুকিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর আমেনার মৃত্যু হলে তিনজনে মিলে নালার মধ্যে লাশ ফেলে দেয়।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ