চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: ‘ভারতীয় দালালদের’ সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। শনিবার (৩০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) আয়োজিত ‘স্মৃতির মিনার: গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’ শীর্ষক সভায় অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘খুবই দুঃখ ও অবাক লাগে যখন দেখি আজগুবি, ভিত্তিহীন, অকল্পনীয় তথ্য দিয়ে একজন আরেকজনের পেছনে লেগে আছে। একটা ভিডিওতে নাকি দাবি করা হয়েছে- আগস্টের ৩ ও ৪ তারিখ রাতে আমি ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম। সেখানে আর্মি অফিসারদের নিয়ে ভারতের দালালদের সঙ্গে মিটিং করেছি। আমি অবাক হয়ে যাই, মানুষের কল্পনারও একটা সীমা থাকা উচিত!’
আসিফ নজরুল আরো বলেন, ‘৩ আগস্ট রাতে মাহবুব মোর্শেদসহ (বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক) অন্যদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের ১৯ নম্বর বিল্ডিংয়ে ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোস্তফা মামুনের বাসায় থেকেছি। আশঙ্কা ছিল, আমাকে মেরে ফেলবে, না হলে গ্রেপ্তার করবে। ’
তিনি বলেন, ‘আর ৪ আগস্ট সন্ধ্যার পরে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের একটি প্রোগ্রামে আমি অংশ নিয়েছি। যার অডিও আপনারা অনেকেই শুনেছেন। যেখানে আমি বলেছিলাম, আমাদেরকে মেরে ফেলতে পারে। কারণ, সবাই আমাদেরকে বলেছে পালিয়ে যেতে। তারপর সেদিন রাতেও ঢাবি শিক্ষক মোস্তফা মামুনের বাসায় ছিলাম। সবকিছুর একটা সীমা আছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতভেদ থাকবে। আমরা একজন আরেকজনের কাজের সমালোচনা করব, কিন্তু মিথ্যা কথা কেন বলব? মানুষজন আমাকে বলে, ‘আপনি ক্লিয়ার করেন।’ আমি বলি, ‘আমি কি ক্লিয়ার করব?’
সত্যের কাছাকাছি থাকলে মানুষ প্রতিবাদ করে। আজগুবির একটা সীমা থাকা দরকার। অবশ্য এমনটি শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, সবার ক্ষেত্রেই কমবেশি হচ্ছে।’
ড. আসিফ বলেন, ‘আমাদের কাজের সমালোচনা করবেন, সমস্যা নেই। কিন্তু যখন সম্পূর্ণ আজগুবি, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করা হয়, তখন মনে হয় সমালোচনাটি অসৎ উদ্দেশ্যে করা। এই সরকারকে শক্তিহীন করা, আন্দোলনকারী মানুষের মধ্যে অনৈক্য নিয়ে আসা, দেশকে অস্থিতিশীল করা। পরাজিত শক্তির হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার অভিপ্রায়ে এগুলো করা হয়। তখন মনে হয়, এই দেশকে ঘিরে আমাদের এক প্রতিবেশী দেশের স্ক্রিপ্ট আছে না— শেখ হাসিনা চলে গেলে আর কেউ দেশ চালাতে পারবে না অথবা দেশ উগ্রবাদীদের খপ্পরে পড়বে, তার (হাসিনা) কোনো বিকল্প নেই— এই ভারতীয় স্ক্রিপ্ট এখানে রূপায়িত করার কাজে নেমেছে কিছু মানুষ।’
তিনি বলেন, ‘যদি নিজেরা নিজেরা ঝগড়াঝাঁটি করে নিজেরা নিজেদের কুৎসা রটাই, চরিত্র হনন করি, মিথ্যা তথ্য দিই, তাহলে ছাত্র-জনতার আত্মবলিদানের প্রতি অশ্রদ্ধা জানানো হয়।’
নিজের বিরুদ্ধে করা অভিযোগকে অপপ্রচার উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘কারও প্রতি অভিযোগ নেই, সবার প্রতি অনুরোধ, সত্য জানার চেষ্টা করেন। মিথ্যা, অত্যাচার, নিপীড়ন, দোষারোপ— এগুলো পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তির অস্ত্র ছিল।’
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের অবদানের কথা তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, ‘তারা আমাদের কি ভয়াবহ ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে রেহাই দিয়েছে! আজকে ব্যর্থ হলে আমাদের কী অবস্থাটা হতো? এটি যেন আমরা মনে রাখি। আজকে যদি আবারও ব্যর্থ হই, তাহলে সেই অবস্থাই হবে। আমাদের কাছে ভয় লাগে- আমরা এবার যদি ব্যর্থ হই, বাংলাদেশ কাশ্মীরে পরিণত হবে, কাশ্মীরের কাছাকাছি পরিণত হবে। আমরা যেন এই বিষয়টি মনে রাখি।’
সভায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট ফেরদৌস আরা রুমী, বাসস পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও দৈনিক ইত্তেফাকের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার আলদীন, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান প্রমুখ।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ