বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন সমন্বয়করা। সরকার মূল দাবি মেনে নেওয়ায় সব আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে তারা।

রোববার (২৮ জুলাই) রাতে এ ঘোষণা দেয়া হয়।

এসময় তারা একটি লিখিত বার্তা পাঠ করেন, এতে লেখা ছিলো, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিত আহত এবং নিহত হয়েছেন। তাছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার যা ইতিমধ্যে সরকার পূরণ করেছেন। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি জর দেয়ার আহবান জানাই। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মূহুর্ত থেকে আমাদের কর্মসূচী প্রত্যাহার করছি।

লিখিত বার্তায় স্বাক্ষর করেন আন্দোলনের সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মো. আবু বাকের, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুম।

এসময় তারা সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে আহ্বান জানান। সহিংসতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তদন্ত করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন সমন্বয়করা।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের আগে সরকারি চাকরিতে কোটায় প্রায় ৫৬ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হতো। তবে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।

সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওইসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।

এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

এরপর থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভ করেন কোটাবিরোধীরা। ঢাবি ছাড়াও বিক্ষোভ হয় জাবি, জবি, রাবি, সাত কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে।

পরবর্তীতে নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে এ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে গত ১৬ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে সহিংসতায় অন্তত ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল রোববার বলেছেন এবারের সহিংসতায় ১৪৭ জন মারা গেছে যার মধ্যে ১১ জন আওয়ামী লীগ কর্মী। বাকীরা শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

আবার এই সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে সারাদেশে এ পর্যন্ত অন্তত নয় হাজার ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু পুরনো মামলার আসামি থাকলেও বাকীরা কোটা আন্দোলনের সময় সহিংসতায় জড়িত ছিলেন বলে দাবি করছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশ শনিবার পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন থানায় ২০৭টি মামলা দায়েরের কথা জানিয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার আড়াই হাজার ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে র‍্যাবের হাতেও গ্রেফতার হয়েছেন তিনশ জনের মতো। অভিযান এখনো চলমান রয়েছে।

এছাড়া রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

চাটগাঁ নিউজ/এআইকে

Scroll to Top