সরোজ আহমেদ : দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদ। আর একদিন পর বৃহস্পতিবার মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। তারও দুদিন পর পহেলা বৈশাখ। দুই উৎসব মিলিয়ে অন্তত পাঁচদিনের টানা ছুটি। উৎসবের দিনগুলোকে মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দে মেতে উঠে। এসময় ভিড় জমে পর্যটন এলাকায়। এমন আশায় প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের অপার আধার চট্টগ্রামের বিনোদন স্পটগুলো সাজছে বর্ণিল সাজে।
পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার ঈদে সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায়। সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দেখতে ভিড় জমাবে দর্শনার্থীরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম জোনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটনের স্থানগুলোতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে অনুযায়ী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে কুইক রেসপন্স টিম, টহল পুলিশ থাকবে পর্যটনের স্থানগুলোতে। সবচেয়ে বেশি ভিড় হবে পতেঙ্গায়, সেখানে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। হেল্পডেস্কসহ রেসপন্স টিম থাকবে, পর্যটকরা কোনো অভিযোগ করলে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
যেসব পর্যটন স্পটগুলোতে আমাদের অবস্থান আছে, সেগুলোতে পর্যটকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে—যেন তারা আনন্দ উপভোগ করতে পারে। এখন প্রচণ্ড গরম, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় আমাদের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
জানা গেছে, দর্শনার্থীদের ঈদ আনন্দে মেতে ওঠার জন্য প্রস্তুত ডিসি পার্ক, চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক, কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত অভয়মিত্র ঘাট, নেভাল-টু, বহদ্দারহাট স্বাধীনতা পার্ক, আগ্রাবাদ শিশু পার্ক, আগ্রাবাদ জাতি তাত্ত্বিক জাদুঘর, মেরিড ড্রাইভ সড়কে জেলা প্রশাসনের ফ্লাওয়ার পার্ক, নগরীর পতেঙ্গায় বাটারফ্লাই পার্ক, হালিশহর সাগরপার। এ ছাড়া নগরীর বাইরে আনোয়ারায় পারকি সমুদ্রসৈকত, সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত, চন্দ্রনাথ পাহাড় ও মিরসরাইয়ে মহামায়া লেক, ফটিকছড়ি চা বাগানসহ বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে যাবে মানুষ।
এ ছাড়া শাহ আমানত সেতুতেও বেড়াতে বের হওয়া প্রচুর মানুষের ভিড় জমে। এবার সেতুর বাকলিয়া প্রান্তের দক্ষিণে নদীতীরে বাঁধ দিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) যে সড়ক তৈরি করছে, সেটিও দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অনেকে সেখানেও ঘুরতে যেতে পারেন। এছাড়া নৌকায় চড়ে কর্ণফুলী ভ্রমণ তো আছেই!
এই ঈদে আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ফয়’স লেক কমপ্লেক্স। যেখানে সব বয়সী মানুষের আনন্দ-বিনোদনের জন্য রয়েছে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ড।
অ্যামিউজমেন্ট পার্ক পরিচালনাকারী কনকর্ডের উপ-ব্যবস্থাপক (বিপণন) বিশ্বজিৎ ঘোষ চাটগাঁ নিউজকে বলেন, ‘ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে পার্ক খুলে দেওয়া হবে। ঈদের দিন থেকে টানা দশদিন উৎসব চলবে। গেম-শো, মিউজিক শো এবং ম্যাজিক শোসহ বেশ কিছু ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। ওয়াটার পার্ক সী-ওয়ার্ল্ডে অনুষ্ঠিত হবে ডিজে শো। বাংলো এবং রিসোর্টগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে।’
তিনি জানান, ঈদের পরদিন থেকে পরবর্তী তিনদিন পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ হাজার করে ট্যুরিস্ট আসবে। প্রতিবছর অন্তত ১০ দিন লোকজন আসে। ৫০ হাজারের মতো দর্শনার্থী আসবে।
চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ বলেন, ‘এবার দর্শনার্থীর সমাগম অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি হবে বলে ধারণা করছি। ঈদের দিন থেকে পরবর্তী পাঁচদিন পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হতে পারে। বিপুল দর্শনার্থীর চাপ সামলানোর সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বাঘের তিনটি শাবককে আমরা খাঁচায় উন্মুক্ত করেছি। জলহস্তী আসার পর এটা প্রথম ঈদ। এবার দর্শনার্থীরা বাড়তি বিনোদন পাবেন।’
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে চিড়িয়াখানায় ৭২ প্রজাতির ছয়’শরও বেশি প্রাণি আছে, যার মধ্যে ৩০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৮ প্রজাতির পাখি ও ৪ প্রজাতির সরীসৃপ। স্তন্যপায়ী প্রাণির মধ্যে আছে- রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভারতীয় সিংহ, এশীয় কালো ভালুক, আফ্রিকান জেব্রা, মায়া হরিণ, চিত্রা হরিণ, সাম্বার হরিণ, প্যারা হরিণ, মুখপোড়া হনুমান, উল্লুক, রেসাস বানর, উল্টো লেজি বানর, মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, চিতা বিড়াল, গন্ধগোকুল (হিমালিয়ান), বাঘডাস, গয়াল, খরগোশ, সজারু, শিয়াল। পাখির মধ্যে তিতির, ময়ূর, রাজ ধনেশ, কাক ধনেশ, শকুন, মদনটাক, সাদা বক, নিশি বক, তিলাঘুঘু, ভুবন চিল, কোকিল, ময়না, খঞ্জনা পাখি, তার্কি মুরগি আছে।
এছাড়া মিনি এভিয়ারিতে ছয় প্রজাতির ৩৪২টি বিদেশি পাখি আছে। এগুলো হল- লাভ বার্ড, লাফিং ডাভ, ফিজেন্ট কবুতর, রিং নেড প্যারোট, ককাটেল এবং ম্যাকাও। চিড়িয়াখানায় সরীসৃপের মধ্যে আছে- অজগর, মিঠাপানির কুমির ও কচ্ছপ।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ