চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: শনিবার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড়ের বৈঠকখানা মিলনায়তনে ‘স্টুডেন্ট এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (SAD)’ এর উদ্যোগে “বাকশালি হকমত ও তার এস্থেটিক সমূহ অবস্থান” শীর্ষক একটি বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা ও বাকশালের ঐতিহাসিক প্রভাবের উপর আলোকপাত করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক, চাকুরিজীবী এবং রাজনীতিবিদসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষ। বিশিষ্ট বক্তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা, সাংস্কৃতিক প্রভাব এবং জনমনের পরিবর্তনশীল অবস্থান নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
সভার প্রধান আলোচক ছিলেন ভাবুক ও বয়াতি রক মনু। তিনি তার আলোচনায় বাকশাল শাসনব্যবস্থা এর নান্দনিক অবস্থান এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের উপর বিশদ আলোচনা করেন।
রক মনু বলেন, ‘বাকশালি হুকমত কেবল একটি শাসন কাঠামো নয়, এটি একটি এস্থেটিক অবস্থানও তৈরি করেছে যা রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। শেখ মুজিবের সময় থেকে শুরু হওয়া এই বাস্তবতা আজও বিভিন্ন আঙ্গিকে বাংলাদেশে বিরাজমান।’ বক্তারা বাকশালের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা নিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন।
SAD-এর আহ্বায়ক জুবাইরুল হাসান আরিফ বলেন, ‘আমাদের সমস্ত অ্যাক্টিভিজমের লক্ষ্য হওয়া উচিত এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা যেখানে আরেকটি বাকশাল কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে।
গণসংহতি আন্দোলনের নেতা হাসান মারুফ রুমি মন্তব্য করেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এককভাবে দখল করার মাধ্যমেই আওয়ামী লীগ বাকশালি শাসনের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিল।
বিশিষ্ট সাংবাদিক ফারুক মুনির বলেন, ‘বাকশালির সিলসিলা আজও শেষ হয়নি। আমাদের সমাজে এখনও বাকশালের ধারাবাহিকতা বিদ্যমান, যা গণতান্ত্রিক কাঠামোকে আঘাত করে চলেছে।
SAD-এর সহ-সংগঠক জগলুল আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘শেখ মুজিবকে ৭১ এর মাস্টারমাইন্ড হিসেবে তুলে ধরাটা হলো এক ধরনের ‘বাকশালি মিথ’, যা বুদ্ধিজীবী মহলে একটি গভীর রাজনৈতিক বাস্তবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বিএনপিও এই ধরনের বাকশালি বাস্তবতার বাইরে নয়, এবং সংবিধানকে একধরনের পবিত্র কিছুরূপে দেখানো আসলে একটি বাকশালি চিন্তাধারা।’
SAD-এর সহ-সংগঠক মোহাম্মদ জামির তার বক্তব্যে শেখ মুজিবের শাসনকাল এবং স্বাধীনতার পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, শেখ মুজিবের শুধু ‘আমার আমার’ বলার মধ্যে রাজনৈতিক নেতার ব্যক্তিগত ক্ষমতাকেন্দ্রিক মনোভাব প্রতিফলিত হয়, যা একাত্তরের বিপ্লবকে বেহাত করেছে।
আলোচনা শেষে রক মনু শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং বর্তমান বাকশালি বাস্তবতার সাথে কীভাবে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায় সে বিষয়েও দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেন।
SAD-এর এই আয়োজন সমাজের বিভিন্ন অংশের মাঝে রাজনৈতিক সচেতনতা ও সাংস্কৃতিক বোঝাপড়াকে নতুনভাবে উন্মোচিত করেছে। আয়োজকরা জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে, যা সমাজের সচেতন মানুষদের জন্য একটি চিন্তাশীল মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।
চাটগাঁ নিউজ/জেএইচ