বাঁচানো গেল না সেই নবজাতককে

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাত্র সাড়ে পাঁচ মাস সময়ে গর্ভপাত হওয়া নবজাতককে মৃত ঘোষণার পর কার্টুনে পেছিয়ে পরিবারকে বুঝিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে ওই নবজাতকের লাশ কবর দিতে গিয়ে ঘটে অবিশ্বাস্য ঘটনা। কার্টন খুলতেই কান্না শুরু করে নবজাতক। পরে আবার নবজাতককে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেন স্বজনরা। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না, হাসপাতালেই মারা গেল নবজাতক।

সোমবার (৩ জুন) রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। রাতেই তাকে পূর্বে খোঁড়া কবরে দাফন করা হয়েছে।

উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামে ঘটে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির মো. ইউনুস আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তার শনিবার (১ জুন) রক্তক্ষরণ হলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এতে রিপোর্ট ভালো না বলে হাসপাতলে ভর্তি হওয়ার জন্য বলা হয় জেসমিনকে। ভর্তি হওয়ার পর ওই দিন দিবাগত রাত আনুমানিক ৯টায় অপারেশন থিয়েটারে জেসমিনের স্বাভাবিক গর্ভপাত হয়। পরে ১৫ মিনিট পর্যবেক্ষণের পর কর্তব্যরত গাইনি চিকিৎসক নবজাতকটি মারা যায় বলে স্বজনদের জানায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি কাগজের কার্টুনে দড়ি দিয়ে পেঁছিয়ে নবজাতককে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়।

নবজাতকের মা জেসমিন আক্তার অভিযোগ করেন, ‘আমি নিয়মিত মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করাতাম। সর্বশেষ গত ১ জুন সকালে আমার রক্তপাত শুরু হলে পুনরায় চিকিৎকের কাছে যাই। সেখানে তারা আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট দেখে আমাকে ভর্তি হতে বলে। ভর্তি হওয়ার পর তারা আমাকে ব্যথানাশক ইনজেশন দেয়ার কথা বলে মূলত গর্ভপাতের জন্য ওষুধ পুশ করেছে।’

এদিকে, জেসমিনের স্বজনরা দাবি করেন, বাচ্চাটি যখন দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তখন হঠাৎ একটা কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো পশুপাখির ডাক। পরবর্তী আবার যখন একই আওয়াজ শুনি তখন আমরা কাটুন খুলে দেখি বাচ্চা জীবিত। কার্টুনের ভিতরে পশ্রাব-পায়খানাও ছিল। ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমার বুকের ধনকে মেরে ফেলেছে। আমি তাদের বিচার চাই।

নবজাতকের বাাবা মো. ইউনুস আলী অভিযোগ করেন, প্রথমে তারা বাচ্চা মারা গেছে বলে অ্যাবোসান করান। জন্মের পর যদি ঠিক সময়ে চিকিৎসা দেয়া হত তাহলে হয়তো আমার বাচ্চা বেঁচে যেত। তারা আমার জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে কাটুনে প্যাকেট করতে বলে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তারের অবহেলায় আমার ছেলে মারা গেছে।

হাসপাতালের কর্তব্যরত গাইনি চিকিৎসক ডা. শারমিন আয়েশা এতসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখি তার জরায়ুমুখ খুলে বাচ্চা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। তখন ইনজেকশন দিয়ে জরায়ুমুখ বন্ধ এবং ব্যথা কমানোর চেষ্টা করি। সাধারণত ২৮ সপ্তাহ হলে বাচ্চা ডেলিভারি করা সম্ভব হয়। তবে ২২ সপ্তাহ হওয়ায় পরিবারের সাথে কথা বলে গর্ভপাত করা হয়। স্বাভাবিক গর্ভপাতের পর বাচ্চাটি দুই হাত দুই পা নড়াছড়া করে। এরপর প্রায় ২০ মিনিট আমার অবজারবেশনে রাখা হয়। পরে এটিকে একটি কার্টুনে রাখা হয়। আমরা তাদেরকে কোনো ডেথ সার্টিফিকেট দিই নাই। কবরস্থ করতেও বলি নাই।’

চাটগাঁ নিউজ/এসএ

Scroll to Top