সৌদি আরব প্রতিনিধি: প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে জাতির পিতার জ্যৈষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শহিদ শেখ কামাল এর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মানে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহবান জানিয়েছেন রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। দেশের ইতিহাস জেনে হৃদয়ে বাংলাদেশকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেকে তৈরি করার জন্য নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের আহবান জানান রাষ্ট্রদূত।
আজ সকালে দিবসটি উপলক্ষ্যে দূতাবাস চত্বরে ক্যাপ্টেন শহিদ শেখ কামাল এর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। এ সময় দূতাবাসের সকল কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রিয়াদস্থ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ইংরেজি শাখা ও জাতীয় কারিকুলামের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। রিয়াদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শহিদ শেখ কামাল এর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, জাতির পিতার জ্যৈষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শহিদ শেখ কামাল ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশে আধুনিক ক্রীড়া ও সংস্কৃতি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশের যুব সমাজকে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করে একটি আধুনিক উন্নত সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, শেখ কামাল ছিলেন একজন সৃজনশীল উদ্যমী প্রাণবন্ত তরুণ, যিনি মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন, একজন সংগঠক হিসেবে ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখেছেন, সংগীত, নাটক, সংস্কৃতিতে ও সামাজিক কর্মকান্ডে তরুণদের নেতৃত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে্রিতি। তাঁর জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার আহবান জানান রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত বলেন, শেখ কামাল ছিলেন ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। শৈশব থেকে ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় প্রচণ্ড উৎসাহ ছিল তার। তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন বাংলাদেশে আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সে সময়ের জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শেখ কামাল সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতের দেরাদুনে মূর্তি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। শেখ কামাল ছিলেন ৬১ জন সৌভাগ্যবান তরুণদের একজন যারা বাংলাদেশ ফার্স্ট ওয়ার কোর্স সমাপন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ঘাতকের বুলেট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। শেখ কামালের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ক্রীড়াক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত, উচ্চ আয়ের স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মানের লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান রাষ্ট্রদূত।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল জাতীয় কারিকুলামের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামিয়া ফরহাদ তানহা ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ইংরেজি শাখার অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রোজানা মারিয়াম ক্যাপ্টেন শহিদ শেখ কামালের জীবনের ওপর আলোচনা করে। এছাড়া রিয়াদস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন ও আওয়ামী পরিষদের সভাপতি এম আর মাহাবুব দিবসটি উপলক্ষ্যে বক্তব্য প্রদান করেন।
দূতাবাসের প্রথম সচিব মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে শেখ কামালের জীবন ও কর্মের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং জাতির সুখ সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।