পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পাওয়ায় চসিক মেয়রের ক্ষোভ প্রকাশ

জলাবদ্ধতা নিরসনে মতবিনিময় সভা

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন কাজে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘নালা-নর্দমা পরিষ্কারে একশ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চাইলেও মাত্র পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

সে টাকাও এখনো ছাড় হয়নি। সরকার গুরুত্বটা বুঝছে না, এটা দুঃখ করে আজকে বলতে হচ্ছে। কেন বুঝতে পারছে না, তারা হয়তো মনে করছে, টাকা খেয়ে ফেলবে, নাকি?

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের যৌথ আয়োজনে নগরের সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র এসব কথা বলেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম।

জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে যুক্ত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নিয়েছি তিন মাস হয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে দেখি, সাড়ে চার শ কোটি টাকা দেনা রেখে গিয়েছে। তাই নগরের ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালা-নর্দমা পরিষ্কারের জন্য ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চাই। টাকা তো অনেক খরচ হয়ে গেছে। এখন নালা-নর্দমা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, মাত্র পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা–ও এখনো পাওয়া যায়নি। সরকার কেন বুঝতে পারছে না? তারা হয়তো মনে করছে, টাকা খেয়ে ফেলবে, নাকি। আমি বুঝতে পারছি না। এটা আমি দুঃখের সঙ্গে বলছি। উনি (উপদেষ্টা) আছেন, এ জন্য বলছি৷ আমি ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারি।’

এখন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ থাকা টাকা নালা-নর্দমা ও খাল পরিষ্কারে খরচ করতে হচ্ছে বলে সভায় জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন।

তিনি জানান, সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জলাবদ্ধতা না কমলে চট্টগ্রামে আসবেন না। প্রধান উপদেষ্টাকে তিনি বলেছেন, জলাবদ্ধতা কমবে, আপনিও আসবেন।

প্রকল্প অনুমোদনে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নগরে এমনও জায়গা আছে, যেখানে খাল ও নালা-নর্দমা পরিষ্কারের জন্য গাড়ি বা বড় মেশিন ঢুকতে পারে না। এ ধরনের নাল-নর্দমা ও খাল পরিষ্কারের জন্য যন্ত্রপাতি কিনতে ২৯৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ছয়-সাত মাস আগে সেটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় যদি গুরুত্ব নিয়ে না দেখে, তাহলে জলাবদ্ধতার সমস্যা কীভাবে সমাধান করব। ওখানে উপদেষ্টা ও সচিব পরিবর্তন হচ্ছে, একজনের পর আরেকজন আসছেন, এই হচ্ছে অবস্থা। সবাই যদি গুরুত্ব দিয়ে দেখে, তাহলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।’

নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ সিটি করপোরেশনের পরিবর্তে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দেওয়ার মাধ্যমে অনিয়ম হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সিডিএর যে কাজ, তা শেষ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনকে বুঝিয়ে দিতে হবে। যতই নিতে চাই না কেন, অন্য কোনো উপায় নেই। এখন জলকপাট (স্লুইসগেট), খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সিটি করপোরেশনকে করতে হবে। এ জন্য লোকবল দরকার, তাঁদের প্রশিক্ষণ দরকার, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ দরকার। এ জন্য বাজেট দরকার।’

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতার সমস্যা উপদেষ্টা পরিষদে অগ্রাধিকার পেয়েছে। চারজন উপদেষ্টা দায়িত্বে আছেন। তাঁদের মধ্যে একজন করে প্রতি সপ্তাহে চট্টগ্রামে আসবেন। বাজেটে ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি রয়েছে। তবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি জানান প্রকল্প পরিচালকেরা। প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হচ্ছে ১৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিডিএর চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম, সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস প্রমুখ। সভায় অংশ নেওয়ার আগে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম নগরের বিভিন্ন খালে চলমান জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন করেন।

চাটগাঁ নিউজ/এমকেএন/জেএইচ

Scroll to Top