সিপ্লাস ডেস্ক: পূরণ হলো পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচলের স্বপ্ন। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে স্বপ্নের পদ্মা সেতু রেল সংযোগে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মাওয়া রেল স্টেশন প্রাঙ্গণ থেকে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি। সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সড়ক পথে গণভবন থেকে মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ১০টা ৫৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী মাওয়া পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন ছোট বোন শেখ রেহানা।
উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী দুপুর পৌনে ১টায় বিশেষ ট্রেনে মাওয়া থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনে যাবেন।
পদ্মা সেতুতে রেল চলাচলের মাধ্যমে রেলপথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এল রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি। রেলপথে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব কমল ২১২ কিলোমিটার। স্বল্প সময়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে সম্ভাবনার দুয়ার গেল খুলে।
চীনের ঋণে প্রায় ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার ব্রডগেজ সিঙ্গেল লাইন নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই রেলপথের রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৭৭ কিলোমিটার চালু হচ্ছে আজ। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর জুনে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলবে।
গত বছরের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেন প্রতীক্ষার পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বিতল এই সেতুর ওপরতলায় চলছে গাড়ি; নিচতলা দিয়ে চলবে ট্রেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন শুরু হয়। পদ্মা সেতুর মতো পদ্মা রেল সংযোগও সরকারের অগ্রাধিকারের প্রকল্প। টাকার অঙ্কে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং মেট্রোরেলের পর এটি তৃতীয় বৃহত্তম প্রকল্প। পদ্মা রেল সংযোগের উদ্বোধন উপলক্ষে সাজ সাজ রব পড়ে পদ্মার দুই তীরে।
যেভাবে শুরু ট্রেনে পদ্মা পাড়ির স্বপ্ন
২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে রেল চলাচল সুবিধা যুক্ত করার নির্দেশ দেন। এর মাধ্যমে শুরু হয় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের স্বপ্ন। অর্থায়ন জটিলতায় তা আটকে থাকে কয়েক বছর। চীনের ঋণ প্রতিশ্রুতিতে ২০১৬ সালে সরকারের অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ট্রেন চালানোর লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালের ৩ জুলাই পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ওই বছরের এপ্রিলে চুক্তি সই হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের (সিআরইসি) সঙ্গে। প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)।
ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথের ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার নির্মাণ হয়েছে ভায়াডাক্টের ওপর। এটিই দেশের প্রথম উড়াল রেলপথ। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর এবং শরীয়তপুর জেলা রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে। আগামীতে যুক্ত হবে নড়াইল।
পদ্মা সেতুতে চলবে যেসব ট্রেন
গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলে। এর সফলতায় আজ শুরু হচ্ছে আনুষ্ঠানিক ট্রেন চলাচল। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলে আরও কিছু দিন লাগবে। রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী সমকালকে বলেন, ‘ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি রয়েছে। নির্দেশ পেলেই চালানো যাবে।’
পদ্মা সেতু হয়ে আপাতত তিনটি ট্রেন চালাবে রেলওয়ে। এগুলো হলো, ঢাকা-খুলনা রুটের সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঢাকা-যশোর রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস। রাজবাড়ী-রাজশাহী রুটের মধুমতি এক্সপ্রেসের চলাচল ঢাকা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। ইতোমধ্যে ট্রেনগুলোর নতুন ভাড়ার তালিকা প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে, যা রেল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান সমকালকে এর আগে জানান, ‘উদ্বোধনের সপ্তাহ তিনেক পর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে।’
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীনে ১০০ বগি কেনা হয়েছে চীন থেকে। তবে আপাতত পুরোনো ট্রেনগুলোই চলবে। রেলের মহাপরিচালক জানান, বর্তমানে যেসব ট্রেন চলছে, সেগুলোই আপাতত চলবে। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের চাহিদা এবং পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরে নতুন ট্রেন চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
যা যা থাকছে পদ্মা রেল সংযোগে
১৬৯ কিলোমিটার ছাড়া আরও তিন কিলোমিটার মূল লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে প্রকল্পের অধীনে। ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার সাইড এবং লুপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। সর্বমোট নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার।
৬৬টি বড় সেতু নির্মাণ করা হয়েছে এই রেলপথে। ২৪৪টি ছোট সেতু এবং কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। মাওয়ায় একটি সড়ক ওভারপাসসহ ২৯টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হয়েছে। এ রেললাইন পুরো পথে কোথাও গাড়ি চলাচলে বাধা হবে না। ১৪টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। পুরোনো ৬টি স্টেশনের খোলনলচে বদলে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। ঢাকা-পদ্মা সেতু-ভাঙ্গা অংশে স্টেশন সংখ্যা ৯টি। ২০টি স্টেশনই চলবে কম্পিউটারভিত্তিক ইন্টারলক্ড সিগন্যাল পদ্ধতিতে। এক হাজার ৭৯৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নে।