নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) তেলবাহী জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতি ও এমটি বাংলার সৌরভের আগুন নিয়ন্ত্রণ ও নাবিকদের উদ্ধার পরবর্তী চিকিৎসা সহায়তায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী অনন্য কাজ করেছে। দুটি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এই সংস্থাটির টাগশীপ দিয়ে ও স্বেচ্ছাসেবক দল প্রেরণ করে সহযোগিতা করেছে। বিশাল আকারের এই জাহাজ দুটি বিস্ফোরণে ডুবে গেলে বন্ধ হয়ে যেত চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ চলাচল। স্থবির হয়ে পড়তো দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। নৌবাহিনীর সফল অগ্নিনির্বাপণের কারণে বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি থেকে দেশ রক্ষা পেয়েছে। নৌবাহিনীর এমন অংশগ্রহণে উজ্জ্বল হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি।
রোববার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক গণমাধ্যমে প্রেরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, শুক্রবার ৪ অক্টোবর রাত আনুমানিক পৌনে ১টার সময় বন্দরের বহির্নোঙ্গরে থাকা অবস্থায় বিএসসির মালিকানাধীন তেলবাহী জাহাজ এমটি বাংলার সৌরভে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় নৌবাহিনীর ৩টি বিশেষায়িত টাগশীপ, কোস্টগার্ড ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ৪ টাগশীপ মিলে অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় জাহাজটিতে থাকা ৪৮ নাবিকের মধ্যে ৪৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। একজন নিহত হন। দুর্ঘটনায় আহত কয়েকজনকে নৌবাহিনী হাসপাতাল বানৌজা পতেঙ্গায় চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পাঁচ দিন আগে বন্দরের ৭ নম্বর ডলফিন জেটিতে বিএসসির অপর এক জাহাজ এমটি বাংলার জ্যোতিতে বিষ্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কোস্টগার্ড ও চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কয়েকটি বিশেষ অগ্নি নির্বাপন ক্ষমতাসম্পন্ন টাগশীপ অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, নৌবাহিনী প্রধান মহোদয়ের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল কমান্ডার ও চট্টগ্রামের নৌবাহিনী কর্মকর্তারা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং আগুন নিয়ন্ত্রণের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম বন্দর ও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বড় রকমের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি থেকে রক্ষা পেয়েছে দেশ। এই আগুন ও বিষ্ফোরণ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা রাষ্ট্রীয় তেল বিপণনকারী সংস্থা পদ্মা, মেঘনা যমুনা ও তেল পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি, চট্টগ্রাম শাহ্ আমানত বিমানবন্দর হুমকির মুখে পড়ত। স্থবির হয়ে পড়তো দেশের প্রধান বাণিজ্যিক বন্দর, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলার জ্যোতি জাহাজে ১১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন এবং বাংলার সৌরভ জাহাজে ১১ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল ছিল। এই তেল পানিতে ছড়িয়ে পড়লে কর্ণফুলী নদীসহ বঙ্গোপসাগরে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ত। শুধু তাই নয়, জাহাজ দুটি বিস্ফোরণে ডুবে গেলে বন্ধ হয়ে যেত চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ চলাচল। স্থবির হয়ে পড়ত দেশের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। নৌবাহিনীর সফলভাবে অগ্নিনির্বাপণের কারণে অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব সৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেল দেশ। মেরিটাইম সেক্টরের উর্ধ্বতন পর্যায়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দক্ষ কর্মকর্তাদের পদায়ন এবং তাদের দক্ষ নেতৃত্বে বড় রকমের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেল দেশ এবং বেঁচে গেল হাজারো মানুষের প্রাণ। বাংলাদেশ নৌবাহিনী দেশের যেকোনো বিপর্যয় মোকাবেলায় আস্থা ও সফলতার সর্বদা তার দায়িত্ব পালন করে আসছে। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এ ধরণের কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
চাটগাঁ নিউজ/উজ্জ্বল/এসএ