ঈদগাঁও প্রতিনিধি: বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতকে দ্বিখণ্ডিত করে ইনানীতে নির্মিত নৌবাহিনীর জেটি থেকে সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।
ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানকে স্মারলিপি প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার, জেলা বাপা সভাপতি এইচ এম এরশাদ, সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিমের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসকের হাতে স্মারকলিটি তুলে দেন নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত পৃথিবীর দীর্ঘতম। এটি প্রত্যেক বাঙ্গালীর জন্য অনন্য গর্ব্বিত ঐতিহ্য। ২০১১ সালে প্রণীত কক্সবাজারের মাস্টার প্ল্যানে বালুচর নো ডেভলপমেন্ট এর পর্যায়ভুক্ত। সে অনুসারে সৈকতে কোন ধরনের স্থাপনা করা যাবে না। ১৯৯৫ সালের পরিবেশ আইনে যেসব মৌজাকে নিয়ে ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এলাকা বা ইসিএ ঘোষণা করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইনানী ও তার আশপাশের মৌজা। এছাড়াও ইসিএ এলাকায় পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো স্থাপনা করা নিষেধ।
ইতোপূর্বে ইসিএ আইন অমান্য করে ওই এলাকায় যে হোটেলগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলোও ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য হাইকোর্ট।
এছাড়াও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের দীর্ঘতম একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ। সুতরাং সৈকতকে দ্বিখণ্ডিত করে জেটি নির্মাণ করা গ্রহণযোগ্য নয়।
কিন্তু নৌ মহড়ার নামে সৈকতকে দ্বিখন্ডিত করে ২০২১ সালে একটি ফ্লিট শো আয়োজন করার নামে ইনানী সৈকতের হোটেল রয়েল টিউলিপ পয়েন্টে অস্থায়ীভাবে একটি জেটি নির্মাণ করে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ আছে, জেটি নির্মাণের সময় তথ্য গোপন করে কোন ধরণের মেরিন সমীক্ষা ছাড়া (ইসিএ) ইক্লোজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়াতে সৈকতের একশত ফুট গভীরে কনক্রিটে ঢালাই দিয়ে প্রায় এক হাজার ফুট স্থায়ী পাকা জেটি নির্মাণ করা হয়েছে।
কোন ধরনের বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা ছাড়া যা স্পষ্টতই মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশের সাথে গাদ্দারী।
কক্সবাজার বাসীর পক্ষে ২০২২ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট মামলা হয়, যার নং(১০৪৩৭/২২। ফলে এই জেটি অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হবেনা মর্মে রুল জারী করেন মহামান্য হাইকোর্ট। মামলাটি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
উল্লেখ্য, মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী ইসিএ আইন বাস্তবায়নের জন্য ইতিোপূর্বে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও সিভিল সোসাইটির পক্ষ থেকে মানববন্ধন সভা সমাবেশ সেমিনার হয়েছে।
তারপরও মামলা চলমান অবস্থায় উচ্চ আদালতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে “কর্ণফুলি শিপ বিল্ডার্স” নামের একটি কোম্পানি উক্ত জেটি দিয়ে সেন্টমার্টিন রুটে বানিজ্যিকভাবে জাহাজ পরিচালনা শুরু করেছে। যা দেখে পরিবেশবাদী সংগঠন ও সিভিল সোসাইটির নেতৃবৃন্দ হতাশ এবং ক্ষুব্ধ।
অবৈধভাবে নির্মিত জেটি দিয়ে জাহাজ চলাচলের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ স্পষ্টতই মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের প্রতি তথা আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সামিল বলে মনে করে বাপা।
নৌবাহিনীর নির্মিত অবৈধ জেটি দিয়ে জাহাজ চলাচলের কার্যক্রম অনতিবিলম্বে বন্ধ করা জরুরি বলে জানিয়েছেন পরিবেশ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের নেপথ্যকুশিলব এবং অবৈধ সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও সমুদ্রসৈকতকে প্রাকৃতিক হুমকির হাত থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য বিনীত অনুরোধ করেছে বাপা।
স্মারকলিপি প্রদানকালে জেলা বাপার সহসভাপতি জাফর আলম দিদার, এম আর খোকন, স ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, যুব নেতা ইলিয়াস বেঙ্গল, জাহাঙ্গীর আলম শামস ,নাজমুল হোসেন মিঠু, এস এম রুবেল, উসেন থুয়েন, শহিদুল ইসলাম সাহেদ, আমিনুল হকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাপাসহ পরিবেশবাদী সংগঠনের প্রতিবাদের মাঝেও ইনানী রয়েল টিউলিপের সামনে সমুদ্রসৈকতে নির্মিত নৌবাহিনীর জেটি ব্যবহার করে
রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) থেকে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস নামক জাহাজ চালু হয়েছে। ১১ জানুয়ারি থেকে সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজটি পুরোপুরি চলাচল করবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।