নিজস্ব প্রতিবেদক : সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজকে সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে নেতা বানাতে গিয়ে নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই দুই নেতা।
সোমবার (১৮ মার্চ) রাতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের দফতর সম্পাদক স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই নিদের্শনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে গত ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগরের ৭টি থানা ও ১২টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণার ব্যাখ্যা চেয়ে ৭দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দিতেও বলা হয়েছে।
কারণ দর্শানো নোটিশে বলা হয়, আপনারা চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র মিলনায়তনে বিগত মিটিংএ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, সকলের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, মহানগরের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কোনরূপ সমন্বয় না করে বিগত ১৪ মার্চ ২০২৪ মহানগরের ৭টি থানা ও ১২টি ওয়ার্ডের কমিটি প্রদান করেছেন। সংগঠনের বিভাগীয়, জেলা ও থানাভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকেও কোন প্রকার অবহিত না করে এ ধরণের কমিটি প্রদান সাংগঠনিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী।
গঠনতন্ত্রের কোন ধারা/উপধারা অনুসরণ না করে, কোন ক্ষমতা বলে উক্ত কমিটিসমূহ প্রদান করেছেন? তার সন্তোষজনক লিখিত ব্যাখ্যা আগামী ৭ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা প্রদান এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে সংগঠনের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
এছাড়া উপরোল্লিখিত নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হলে সংগঠনের পক্ষ হতে চূড়ান্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু চাটগাঁ নিউজকে বলেন, নোটিশ শুধু আমাদের দুজনকে দিয়েছে তা নয়, ওদের ১২ জনকেও দেওয়া হয়েছে। তারা সেন্ট্রালি অভিযোগ না করে কেন সংবাদ সম্মেলন এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় নিউজ করলো-এ জন্য তাদেরও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা ও নোটিশের জবাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেন্দ্রের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা লিখিত জবাব দেব। তবে তার আগে আমরা বসে আলাপ আলোচনা করে সবকিছু ঠিক করবো। তাছাড়া কেন্দ্র যেহেতু কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে, তা মেনে চলবো।
সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছেন, সভাপতি ও সম্পাদক থানা পর্যায়ে যেসব বিতর্কিত নেতাদের সমন্বয় কমিটিতে নিয়েছেন, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদকসহ নানা মামলা রয়েছে। দেবাশীষ নাথ ও আজিজুর রহমানের স্বেচ্ছাচারিতায় মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ক্ষুব্ধ নেতারা।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ বলেন, কেন্দ্র থেকে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা সেটি করতে পারে না। তাদের কাছেও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। আর যারা কমিটি ঘোষণা করেছে তারাও একতরফাভাবে ঘোষণা করতে পারে না। তাদেরকেও চিঠি দিয়ে কারণ দর্শানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৪ মার্চ গভীর রাতে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ৭ থানা ও ১২টি ওয়ার্ডের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন।
অভিযোগ উঠেছে, এসব কমিটি রাতদুপুরে ফেসবুকে নাজিল হয়েছে। নগর কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিএনপি-জামায়াতের অঙ্গসংগঠনের রাজনীতি করে আসা ব্যক্তিদের স্বেচ্ছাসেবক লীগে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এমনকি ১৯টি কমিটিকে কেন্দ্র করে নগর থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ তুলছেন অনেকে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বিরোধ পৌঁছেছে চরমে।
এদিকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২০ জনের কমিটির অন্তত ১২ জন এসব কমিটি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। যাদের মধ্যে সাতজন সহসভাপতি ও পাঁচজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ফেসবুকে প্রচারিত থানা ও ওয়ার্ডের ঘোষিত কমিটিগুলো অবৈধ এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র বিরোধী। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজদের পুনর্বাসন করতে একটি পক্ষ এসব কমিটি দিয়েছে। এতে সংগঠনের সুনাম নষ্ট হচ্ছে, প্রকৃত নেতারা অবমূল্যায়িত হচ্ছেন।’
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন, ‘নগর কমিটি গঠনের পর সভাপতি ও সম্পাদক স্বেচ্ছাচারিতার সর্বোচ্চ চর্চা করে যাচ্ছেন। প্রতিটি কমিটি তাদের দুজনের মনগড়া। অন্য কারোর মতামত নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রকেও জানানো হয়নি। এভাবে চিহ্নিত চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের কমিটিতে এনে সংগঠনকে বিতর্কিত করা হচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, ‘যারা অভিযোগ তুলছেন তারা সংগঠনের কোনো কর্মসূচিতে থাকেন না। উনারা কেবল বিএনপির মতো নালিশ করেন। কেন্দ্র থেকে মিলেমিশে থাকতে বলার পরও উনারা অনুষ্ঠানে আসেন না।’
এদিকে, শনিবার (১৬ মার্চ) এসব কমিটি বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রথম সহসভাপতির নেতৃত্বে কমিটির ১২ নেতা। ২০ সদস্যের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে রয়েছেন ৮ জন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, অটোরিকশা চোর, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজ এমনকি স্বেচ্ছাসেবক দল করেন এমন লোকজন দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের থানা এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা করা হয়েছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ