চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : নাশকতা প্রতিরোধে কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
রোববার (২৮ জুলাই) সকালে লালদীঘি পাড়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সম্মেলন কক্ষে চসিকের ৪২তম সাধারণ সভায় মেয়র এ নির্দেশ দেন।
কমিটিতে এলাকার মসজিদে ইমাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সদস্য করে প্রতি মাসে সভা করার নির্দেশ দিয়ে মেয়র বলেন, সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে দেশি-বিদেশি কিছু অপশক্তি মিলে দেশকে অকার্যকর করার অপচেষ্টা চালিয়েছে কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার সাহসী ভূমিকার কারণে এই অপচেষ্টা প্রতিহত করা গেছে। আমি ১৯৬৬ সাল থেকে রাজনীতি করছি। মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমার অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের যে কার্যক্রম তাকে কোনোভাবেই আন্দোলন বলতে পারি না। এটা ছিল রাষ্ট্রধ্বংসের আন্দোলন। না হলে, সেতু ভবন, মেট্রোরেল স্টেশন, হানিফ ফ্লাইওভার, বিটিভি, পুলিশ বক্স এগুলো কী দোষ করেছে? এগুলো কেন ধ্বংস করা হলো? আন্দোলনের নামে টোকাই, ভাড়া করা লোক, বেকার যুবকদের দিয়ে দেশজুড়ে নাশকতা চালানো হয়েছে।
মেয়র বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকলেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে আমাদেরও কিছু নৈতিক দায়িত্ব আছে। জনগণের জান-মাল রক্ষায় কাউন্সিলররা প্রতিটি ওয়ার্ডে নাশকতা প্রতিরোধে অরাজনৈতিক কমিটি গঠন করুন। কমিটিতে মসজিদগুলোর ইমাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানসহ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সদস্য করে প্রতি মাসে সভা করে এলাকার মানুষদের মাঝে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালান। নাশকতামূলক যেকোনো কার্যক্রম তৃণমূলেই রুখে দিন।
কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের ডেঙ্গু প্রতিরোধ কার্যক্রমের গতি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে মেয়র রেজাউল করিম বলেন, বর্ষা চলে এসেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কার্যক্রমের গতি বাড়াতে হবে। কাউন্সিলররা বিষয়টি তদারকি করবেন। লোক সংকট থাকলে তা-ও জানাবেন। তবে, লোক আছে ৫০জন, কাজ করবে ৩০ জন, বাকিরা কাজ না করে বেতন খাবে তা হবে না। যারা কাজ না করে বেতন নিচ্ছে তাদের তালিকা করে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
অবৈধ হকারদের উচ্ছেদে আবার অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় হকারদের ভূমিকা কী তা চট্টগ্রামবাসী দেখেছে। সহিংসতা নিয়ে প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগে নিউমার্কেট মোড়ে আবারও হকাররা রাস্তা দখল করে বসেছে। আমি আবারও নিউমার্কেট মোড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে জনগণকে জনগণের সড়ক ফিরিয়ে দেব। ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে বসে ব্যাটারি রিকশা বন্ধে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। মাদকের বিস্তাররোধে প্রয়োজনে পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দেব। যানজট নিরসনে আগ্রাবাদে পে-পার্কিং চালু করেছি। পার্কিং বাড়াতে আরো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উদ্দেশে মেয়র বলেন, পাহাড়খেকো, পুকুরখেকোদের বিরুদ্ধে আপনারা ১৯৪টি মামলা করছেন বলছেন। কিন্তু মামলা করে কোনো লাভ নেই। আপনার মামলার রায় আসতে আসতে বহুতল ভবন হয়ে যায়। আসকার দীঘি, ভেলুয়ার দীঘিসহ চট্টগ্রামের বহু জলাশয় দখল হয়ে যাচেছ। আপনারা উচ্ছেদ অভিযান চালান, মামলা-জরিমানা করে লাভ নেই। আপনারা পরবর্তী সভায় প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন আপনাদের কার্যক্রমের অগ্রগতির বিস্তারিত জানাবেন।
সিডিএ প্রতিনিধির উদ্দেশে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএর প্রকল্প সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করছে। তবে, কাজের বিষয়ে আপনাদেরই জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং, প্রকল্প দ্রুত শেষ করার বিষয়ে কাজ করুন। বহদ্দারহাটে চান মিয়া সড়কে মানুষ হাঁটতে পারছে না। এলাকাবাসী দল বেঁধে আমার কাছে এসে জানিয়েছে রাস্তার অনেক জায়গায় খালের মতো গর্ত। তারাতো সিডিএ চেনে না, মনে করে এ কাজের দায়িত্বও আমার। আপনারা কাউন্সিলরদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করুন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ পর্যাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের অভাবে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না জানালে মেয়র জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশনা দেন।
যে সব সড়কের নামকরণ করা হয়নি এবং নতুন যেসব সড়ক নির্মাণ করা হবে সেগুলোকে চট্টগ্রামের বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণের ঘোষণা দেন মেয়র। মেয়র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সুচিকিৎসা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিতে বলেন।
সভায় নগরে ছিনতাই ও মাদকের বিস্তার রোধে পুলিশকে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর পরামর্শ দেন কাউন্সিলররা।
ওয়াসার প্রতিনিধি নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রউফ বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাই ইম্প্রুভম্টে প্রকল্প একনেকে পাস ও বাস্তবায়িত হলে ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে সুপেয় পানির হাহাকার থাকবে না। মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ওয়াসার যে কার্যক্রম চলছে তা শেষ হলে চট্টগ্রামের পরিবেশের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।
এ সময় একাধিক কাউন্সিলর ওয়াসার প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ওয়াসা নতুন সড়ক করার পর কেটে ফেলছে। চসিক সড়ক নির্মাণের সময় সড়কের নিচে ম্যাকাডম, বালু, ইট, পাথরসহ যেসব নির্মাণসামগ্রী দেয় ওয়াসার ঠিকাদাররা রাস্তা কাটার পর তা নিয়ে যান এবং কাজের পর সাধারণ মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে দেন। ফলে, বর্ষার সময় সেই মাটি নিচু হয়ে রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায় এবং নাগরিকদের সীমাহীন দুর্ভোগের কারণ হয়।
কাউন্সিলররা ওয়াসাকে কোনো রাস্তা কাটার আগে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভায় চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আমিন, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলরসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধান এবং নগরের বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ