ইফতেকার নুর তিশন : রাজধানী ঢাকার বেইলি রোড ট্র্যাজেডির পর অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ে টনক নড়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও। অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত বন্দরনগরী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শহরজুড়ে ১৭৩টি ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো হলেও সেগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। এ নিয়ে দুই সংস্থার রশি টানাটানিতে জলে গেল সরকারের চার কোটি ১০ লাখ টাকা- এমন মন্তব্য সচেতন মহলের।
ফায়ার হাইড্রেন্ট বা অগ্নিনির্বাপণকাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানিকল ব্যবহার করা নিয়ে দুই সরকারি সংস্থা দুই রকম বক্তব্য দিচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, পানিকলগুলো বসানোর প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি। সেসব পানিকলে পানির চাপ থাকে না; ফলে সেখান থেকে খুব বেশি পানি ওঠে না। এ ছাড়া পানিকলগুলোতে পাইপ লাগানোর ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। হাইড্রেন্ট বসানোর আগে ওয়াসার পক্ষ থেকে কারিগরি সহযোগিতা চাওয়া হয়নি বলে এমনটি ঘটেছে।
তবে ওয়াসা বলছে, সংস্থাটি দুটি পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় এসব ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছে। মূলত এ দুটি প্রকল্পে বিনিয়োগকারী দাতা সংস্থার শর্ত পূরণ করতেই ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালের শুরুতে ‘চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রজেক্ট’-এর আওতায় ২৯টি হাইড্রেন্ট বসানো হয়। পরে ২০২২ ও ২০২৩ সালে ‘কর্ণফুলী ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট’ ফেজ-২ এর আওতায় আরো ১৪৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপপরিচালক আবদুল মালেক বলেন, হাইড্রেন্ট বসানোর আগে ওয়াসার পক্ষ থেকে কারিগরি সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। বসানোর প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি। পানির চাপ না থাকা ও পাইপ লাগানোর ব্যবস্থা না রাখার কারণে এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। অ্যাডাপ্টর কেনার পেছনে ব্যয়ের সুযোগও ফায়ার সার্ভিসের নেই।
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, দেশের কোনো শহরে ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই। ওয়াসা চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো হাইড্রেন্ট বসিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাইড্রেন্টের নমুনা নিয়ে এসব স্থাপন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়ে এসব কাজ করা হয়। ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন শেষ হওয়ার পরও গত বছর ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে ১০টি সভা করেছে। এরপর ফায়ার সার্ভিস হাইড্রেন্ট কেন ব্যবহার করছে না, তা জানা নেই।
অ্যাডাপ্টর না থাকা ও পানির চাপ কম থাকার বিষয়ে মাকসুদ আলম বলেন, একটি অ্যাডাপ্টর তৈরি করতে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হবে। এটি ফায়ার সার্ভিসকেই করতে হবে। আর পানির চাপ চারবার দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ফায়ার সার্ভিসের নিজেদের পাম্প রয়েছে। তারা পাম্প ব্যবহার করে চাপ বাড়াতে পারে, যা করে সংস্থাটি এখনো বিভিন্ন উৎস থেকে পানি নিয়ে অগ্নিনির্বাপণ করে আসছে।
এদিকে দুই সংস্থার সমন্বয়ের অভাবে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান। তিনি বলেন, ওয়াসার উদ্যোগটি ভালো উদাহরণ হতে পারত। সেটি হয়নি। হাইড্রেন্ট বসানোর আগেই কারিগরি বিষয়গুলো সুরাহা করা উচিত ছিল। এখন আর দেরি না করে দুই সংস্থাকে একসঙ্গে বসে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে।
চট্টগ্রাম শহরে গত চার দশকে প্রায় ২৪ হাজার পুকুর, দীঘি, জলাশয় ও জলাধার বিলুপ্ত হয়েছে। একসময় আগুন নেভাতে পানির উৎস ছিল এসব জলাধার। এখন শহর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পানির উৎস নিয়ে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। এর ফলে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে ৬৭৮টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন। ক্ষতি হয়েছে ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
চাটগাঁ নিউজ/এসএ