দুবাই নেমে শুনলেন ভিসা বাতিল, দেশে ফিরে গুনলেন বিশাল জরিমানা!

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুবাই প্রবাসী মোহাম্মদ শওকত দীর্ঘ দুই বছর পর ছুটিতে আসেন বাংলাদেশে। কাজ করতেন দুবাইয়ে একটি ফুটবল ক্লাবে। দেশে ফেরার সময়ই কেটে নেন ফিরতি টিকিটও। যাতে দুবাই ফিরতে টিকিট নিয়ে কোন ঝামেলা না হয়।

৩ মাস ১৫ দিন ছুটি কাটিয়ে ফের দুবাই এয়ারপোর্টে পৌঁছেই বিপত্তি বাধে। ইমিগ্রেশনে গিয়ে আটকে যান শওকত। কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় শওকত আর প্রবেশ করতে পারবেন না দুবাইতে। এ কথা শুনেই যেন মাথায় হাত। জানতে চান কেন প্রবেশ করতে পারবেন না দুবাইতে? পরে ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানতে পারেন ভিসা বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কিছুই জানতেন না শওকত।

এখন প্রশ্ন, বাতিল হওয়া ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট থেকে কিভাবে বিমানে উঠলেন শওকত। শওকতের এমন হয়রানি ও দুর্ভোগের দায়ভার কার। এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি নয় কী?

এদিকে, কোন কুল কিনারা না পেয়ে অগত্যা দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শওকত। দুবাই থেকে কাটেন চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টের টিকিট। তবে বিমান থেকে নামার পর বুঝতে পারেন তাকে চট্টগ্রাম নয়, ঢাকা এয়ারপোর্টে নিয়ে আসা হয়েছে। দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। ঢাকা থেকে একটি ডোমেস্টিক ফ্লাইটে করে ফিরতে হয়েছে চট্টগ্রাম। তবে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে আবারো বাধে বিপত্তি। চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ শওকতের কাছে দাবি করেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৩ টাকা জরিমানা। এতেই যেন স্তব্ধ শওকত। জানতে চান কি অপরাধ তার, কেনই বা তাকে দিতে হবে জরিমানা! এরমধ্যেই তারা রেখে দেন শওকতের পাসপোর্ট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র।

শওকতের প্রশ্নের জবাবে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ বলেন, এই জরিমানা দেশের নয়, দুবাই এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ তা করেছে।

কারণ জানতে চাইলে এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ আরও বলেন, এটাই নাকি দুবাইয়ের নিয়ম। কেউ দুবাই এয়ারপোর্টে নেমে কোন কারণে দুবাই প্রবেশ করতে না পারলে তাকে গুনতে হয় এমন মোটা অঙ্কের জরিমানা।

তবে খবর নিয়ে জানা যায়, মূলত এই জরিমানা কোন ব্যক্তিকে নয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে করা হয়। কারণ হিসেবে উল্লেখ আছে, কেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ যাচাই বাচাই না করে কোনো ব্যক্তিকে দুবাই পাঠাবে? কিন্তু অদ্ভুদ ব্যাপার এয়ারপোর্টের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের ভুল চাপিয়ে দেন সাধারণ যাত্রীদের ঘাড়ে। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে শওকতের সাথেও। এয়ারপোর্টের কর্তৃপক্ষও নিজের ভুল চাপিয়ে দেন শওকতের ঘাড়ে। ফলে জরিমানার ২ লাখ ৬৬ হাজার ১৬৩ টাকা পরিশোধ করতে না পারায় শওকতের পাসপোর্ট আটকে রেখেছেন এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষ।

এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা! শুধু শওকত নয় দেশে শওকতের মতো অনেকেই আছেন যারা এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এমন হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

এই সংবাদ সি-প্লাসটিভির ফেসবুক অফিসিয়াল পেজে প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই কমেন্টে চলছে সমালোচনার ঝড়। এই বিষয়ে মো. হাবিবুর রহমান নামের একজন লিখেছেন, এই জরিমানা হয়তো বিমানকে করেছে। যেহেতু তারা এই ব্যক্তির ভিসা ভ্যালিডিটি চেক করে পাঠান নি। এই দায়ভার বিমানের, ওই ব্যক্তির নয়।

এ নিয়ে মহসিন গাজি নামের আর একজন বলন, এটার দায় দুবাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আমিরাত সরকারের। যেই ব্যক্তির ভিসা ক্যানসেল করা হয়েছে, অবশ্যই সেই ব্যক্তিকে এই তথ্য জানাতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এটা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। বিমানে ওঠার আগে বোর্ডিং পাস যিনি প্রোভাইড করেন, তারও এই বিষয়টি জানার সুযোগ নেই। দুবাই বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ যদি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ইমিগ্রেশনে তথ্যটি জানিয়ে রাখলেও ভুক্তভোগী এই ভাইটিকে চরম বিপাকে পড়তে হতো না। বিষয়টি নিয়ে দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলার স্কোপ রয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চাইলে এই রেমিট্যান্স যোদ্ধার উপর অর্পিত জরিমানাটা মওকুফ করার ক্ষমতা রাখে। আমরা আশা করি তারা তা করবেন। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি তুলে আনার জন্য সিপ্লাসকে অনেক ধন্যবাদ।

এমন ঘটনা তার সাথেও ঘটেছে উল্লেখ আহসান উল্লাহ নামের একজন বলেন, গত মাসে তিন বছর পর বাড়ি যাওয়ার জন্য গেলাম দুবাই এয়ারপোর্ট। যাওয়ার পর দেখি আমার লেভার ক্যানসেল হয়েছে। তারা আমাকে ৪২০০ দেরহাম জরিমানা করা হয়।

সেলিম হোসাইন লিখেছেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আরো অনেকেই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা জরুরি ।

চাটগাঁ নিউজ/এইচএস/এসএ

Scroll to Top