চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক : হঠাৎ করেই সারাদেশে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। হিসেব বলছে, দৈনিক ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা যাচ্ছে ৩ হাজার ঘনফুটের মতো। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা নেমে এসেছে আড়াই হাজারে।
সংকটের কারণে বাসাবাড়িতেও মিলছে না গ্যাস। যেখানে কিছু হলেও গ্যাস মিলছে, তা দিয়ে রান্নার কাজও হচ্ছে না। এজন্য বৈদ্যুতিক চুলা কিংবা সিলিন্ডারেই ভরসা রাখছেন অনেকে। এতে গুণতে হচ্ছে বাড়তি খরচ। রাজধানীর ধানমন্ডির এক গৃহিণী বলেন, আগে দুইটা-আড়াইটার মধ্যে গ্যাস চলে আসতো, এখন একদমই গ্যাস মিলছে না। সারাদিন যদি গ্যাস না থাকে তাহলে একদিকে বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে, অন্যদিকে বৈদ্যুতিক বিলও দেয়া লাগছে।
এদিকে গ্যাসের অভাবে রাজধানীতে প্রতিদিনই সিএনজি পাম্পগুলোয় চোখে পড়ছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও চাহিদামতো গ্যাস মিলছে না। আবার অনেক সময় গ্যাসের চাপ কম থাকায় পাম্পও বন্ধ থাকছে। এতে জনজীবনে যেমন ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি আয়ও কমছে অনেকের।
সিএনজি পাম্পের সামনে অপেক্ষারত একজন বলেন, আড়াই-তিন ঘণ্টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি তারপরও গ্যাস পাবো কিনা নিশ্চিত না। ভাড়াও মারতে পারছি না, নিজে চলা তো দূরের মালিকের প্রতিদিনেই জমার টাকাই উঠাতে পারছি না।
ভাড়ায় গাড়ি চালানো একজন বলেন, সারাদিনে একবার গ্যাস নিলে আগে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার ভাড়া মারতে পারতাম। আর এখন ২ হাজার টাকার ভাড়াও মারতে পারি না। তবে পাম্পে এলেই যে গ্যাস মিলবে এটাও নিশ্চিত নয়।
এ বিষয়ে সিএনজি পাম্পের একজন কর্মকর্তা বলেন, গ্যাসের চাপ আছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ একক। এই অবস্থায় গ্যাস দিলে যিনি ৪০০ টাকার গ্যাস নিচ্ছেন তিনি পাবেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার গ্যাস। এ জন্য গ্যাসের চাপ থাকা প্রয়োজন। সংকটের কারণে প্রত্যাশিত গ্যাস পাচ্ছেন না অনেকে।
গ্যাস সংকট সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানাকে। যার ফলে অনেক কারখানার উৎপাদনও অর্ধেকে নেমে গেছে। এতে উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বায়ারেরা স্বল্প সময়ে অর্ডারগুলো দেয়। গ্যাস সংকটের কারণে আমরা সেই স্বল্প সময়ে অর্ডারগুলো সম্পন্ন করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ, দেখা গেল বায়ার ৬০ দিন সময় দিলো, কিন্তু গ্যাস সংকটে আমরা কোনোভাবেই কিন্তু সেই অর্ডার সম্পন্ন করতে পারছি না।
এর নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে অর্ডার সম্পন্ন করতে না পারায় কিন্তু আমাদের ওপর বায়ারদের আস্থা কমে যাচ্ছে। বর্তমানে আমেরিকার মার্কেটে ভিয়েতনাম কিন্তু এক নম্বরে চলে গেছে, যেখানে বাংলাদেশের এক নম্বরে থাকার কথা ছিল।
গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তিতাস জানায়, দৈনিক চাহিদার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আসে চট্টগ্রামের এলএনজি টার্মিনাল থেকে। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কবলে টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এর কার্যক্রম বন্ধ আছে। ফলে সরবরাহ নেমে এসেছে অর্ধেকে। যা কাটতে আরও অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
চাটগাঁ নিউজ/এআইকে