সিপ্লাস ডেস্ক: রংপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৯৮ সালে এমবিবিএস পাস করে ঢাকায় থিতু হয়েছিলেন। বিভিন্ন হাসপাতাল-ক্লিনিকে করেছেন চাকরি।
চেম্বারে দেখেছেন রোগী। উপার্জিত অর্থে স্ত্রীর নামে গড়েছেন বাড়ি।
কিন্তু অসুস্থতায় আয় বন্ধ থাকায় সেই বাড়ি থেকেই তাড়িয়ে দিয়েছে স্ত্রী-শাশুড়ি।
ডা. মো. কবির হোসেনের এই জীবনচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। সর্বশেষ রেহানা হক মানবিক সোসাইটি নামক একটি সংগঠনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। ঢাকায় রাস্তায় পাগলপ্রায় হয়ে সাহায্যের আশায় মানুষের কাছে হাত পাততে হয়েছে তাঁকে। ফুটপাতে ১০০ টাকার বিনিময়ে লিখে দিয়েছেন প্রেসক্রিপশন। তাঁর বাড়ি নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভা এলাকায়।
২০০৬ সালে বিয়ে করেন ডা. মো. কবির হোসেন। তিনি বললেন, ‘এটা আমার ভুল ছিল। ওদের বিশ্বাস করেছিলাম। মানুষ বহুরূপী। আমি অসুস্থ হওয়ার পর স্ত্রী দেখলো-আমার উপার্জন নেই। তারপর থেকে অবহেলা শুরু। আমার বাড়িতেই আমাকে রাখছে না। শাশুড়িও তাড়িয়ে দিয়েছে। বাসায় গেলে দরজা খুলে না’।
গত ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইসলামপুর এলাকা থেকে কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী এই চিকিৎসককে পাঠিয়ে দেন চট্টগ্রামে। নগরীর প্রবর্তক মোড় এলাকার অতিথিশালায় হয় তাঁর ঠাঁই। পাশাপাশি চলে চিকিৎসা।
ডা. মো. কবির হোসেনকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসতে উদ্যোগী হন অজ্ঞাত রোগীর বন্ধু হিসেবে পরিচিত সাইফুল ইসলাম নেসার। তিনি বাংলানিউজকে জানান, বন্ধু শিশিরের সহায়তায় এই চিকিৎসককে বাসে তুলে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের সমাজসেবক মিজানুর রহমান মজুমদার তাঁকে অতিথিশালায় রেখেছেন এবং খাবারসহ চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন। মানসিক অবস্থা পরীক্ষার জন্য তাঁকে অন্য রোগীর একটি এমআরআই রিপোর্ট দেখানো হয়েছিল। রোগীর চিকিৎসক যে রোগ সনাক্ত করেছিলেন, ডা. কবির হোসেনও একই রোগ সনাক্ত করেছেন।
তিনি আরও জানান, এই চিকিৎসক কিছুটা সেবা পেয়ে পুরনো অনেক স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। দুদিন অতিথিশালায় অবস্থান করার পর তিনি নিজের অনেক সনদপত্র পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। তাই আবারও ফিরে গেছেন ঢাকায়। যাওয়ার আগে বলে গেছেন-কাজ শেষ হলে ফিরে আসবেন চট্টগ্রামে। কারণ এখানেই তিনি ফিরে পেয়েছেন আশ্রয়, মানুষের ভালোবাসা।