আনোয়ারা প্রতিনিধিঃ ‘জলদস্যুরা মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে, আর কথা হবেনা’– বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এটাই ছিল মোবাইল ফোনে স্ত্রী ফারজানা সুলতানার সঙ্গে মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের শেষ কথা।
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে আটক নাবিক শামসু উদ্দীন কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর অয়েলার পদে কর্মরত।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টার দিকে জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। এতে ২৩ বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। তাদের জিম্মি হওয়ার খবর শুনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে নাবিক স্বজনদের।
শুধু শামসু উদ্দীন নয়, সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে আটক হওয়া ২৩ বাংলাদেশি নাবিকের দিন কাটছে বাঁচা মরার আশা নিয়ে। যার মধ্যে ১১জন নাবিক চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ ও লোহাগাড়ার বাসিন্দা।
বুধবার (১৩ মার্চ) সরেজমিনে আনোয়ারা ও কর্ণফুলীতে গিয়ে নাবিক পরিবারের সদস্যদের আহাজারি শোনা যায়। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় তাদের স্বজনদের।
জলদস্যুদের কবলে পড়া নাবিক সাজ্জাদ হোসেনের মা আহাজারি করতে করতে বলেন, আমার ছেলে ফোন দিয়ে বলে আমাদের উপর বিপদ এসেছে। কিছু জলদস্যু আমাদের জাহাজ আটকে তাদের জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। এ কথা বলার সময় দস্যুরা ফোন কেড়ে নেওয়ায় আর কথা হয়নি ছেলের সাথে।
দস্যুদের কাছে জিম্মি থাকা জাহাজটির জিএস নুরু উদ্দীনের মা ইসলাম খাতুন চাঁটগা নিউজকে জানান, আমার কলিজার সন্তানকে শেষ দেখেছি চারমাস আগে। আর শেষ কথা হয়েছে কাল সন্ধ্যায়। আমার মন কাঁদছে আমার ছেলেকে দেখার জন্য। সরকার ও জাহাজের মালিকানা প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাই যেভাবে হোক সবার মায়ের সন্তানকে যেন মায়ের খোলে ফিরিয়ে দেয়।
জাহাজটিতে থাকা আরেক নাবিক আসিফুর রহমানের পিতা আক্তার উদ্দীন জানান, তার ছেলে নতুন নাবিক হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়েছে পাঁচ মাস আগে। জলদস্যুদের হাতে কাল জিম্মি হয়ে পড়ে। ছেলের জন্য টেনশন হচ্ছে। আমরা জাহাজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে যাচ্ছি।
একই জাহাজের আরেক নাবিক শামসু উদ্দীন শিমুলের স্ত্রী ফারজানা সুলতানা চাঁটগা নিউজকে বলেন, তার (শামসু উদ্দীন) সাথে প্রতিদিন কথা হতো দুয়েকবার। জলদস্যু মোবাইল নিয়ে নেওয়ার আগে তার সাথে শেষ কথা হয় আমার। তিনি তখন বলছিলেন, জলদস্যুরা মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে আর কথা হবেনা। এমন বলতে বলতেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
জানা যায়, বাংলাদেশের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। মাঝপথে সোমালিয়া থেকে প্রায় ৪৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে এডেন উপসাগরে জাহাজটিতে হামলা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণ নেয় অস্ত্রধারী জলদস্যুরা। এতে ওই জাহাজে ২৩ বাংলাদেশি নাবিক দস্যুদের জিম্মিতে রয়েছেন। তার মধ্যে চারজন নাবিক আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার।
তারা হলেন- আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর এলাকার মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে শামসু উদ্দীন শিমুল (৩৫), গাজী মিয়ার পুত্র সাজ্জাদ হোসেন, বদলপুরা গ্রামের আক্তার উদ্দীনের পুত্র আসিফুর রহমান (২৪) ও কর্ণফুলী উপজেলার দক্ষিণ শাহমীরপুর গ্রামের মৃত আমীন শরীফের ছেলে নুরু উদ্দীন (৩৫)।
এদিকে জলদস্যুর কবলে পড়া নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা জাহাজটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের চট্টগ্রাম অফিসে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে।
চাটগাঁ নিউজ/এসবিএন/এসএ