চালু হলো মেট্রোরেলের ঢাবি, বিজয় সরণি স্টেশন

চাটগাঁ নিউজ ডেস্ক: মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং বিজয় সরণি স্টেশন যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল রুটের নতুন এই দুই স্টেশন যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

এর ফলে ট্রেনটি এখন উত্তরা নর্থ, উত্তরা সেন্ট্রাল, উত্তরা সাউথ, পল্লবী, মিরপুর-১০, মিরপুর-১১, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল স্টেশনে থামবে। যাত্রীরা সবগুলো স্টেশন ব্যবহার করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন।

মেট্রোতে চড়ার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ড. হাসনা সুলতানা জানান, মিরপুর-১০ থেকে আসতে আগে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা সময় লাগলেও এখন মেট্রো রেলের সুবাদে লাগছে মাত্র ১৫-২০ মিনিট।

তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের অনেকেই কাজে আসতে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। দিনব্যাপী মেট্রোরেল সেবা চালু হলে এই প্রবণতা অনেকটাই কমে আসবে।”

সকাল ৮ টার ডিউটিতে যোগ দিতে আগারগাঁও থেকে ৬টায় বের হতেন ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার ফারজানা স্নিগ্ধা। তিনি জানান, মেট্রো রেলের সুবাদে এখন সকাল সাড়ে ৭টায় বাসা থেকে বের হয়েও সময়মতো অফিসে পৌঁছানো যায়।

তিনি বলেন, “মেট্রো রেল আমার জন্য অনেক সুবিধা নিয়ে এসেছে। এর ফলে প্রতিদিন অন্তত ৩ ঘন্টা সময় সাশ্রয় হচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, “সচিবালয় স্টেশন চালু হওয়ার পর মেডিকেলে আসতে দীর্ঘ পথ হাঁটতে হত। ফুটপাতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে ওই পথে হাঁটাও কষ্টকর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন চালুর ফলে এই সমস্যার অবসান হয়েছে।”

মিরপুর-২ থেকে ক্লাস করতে আসেন বুয়েট শিক্ষার্থী গালিব মাহমুদ শরীফ। তিনি বলেন, বাসে করে মিরপুর ১, নিউমার্কেট, পলাশী হয়ে বুয়েটে আসতে সময় লাগে দুই ঘন্টা। আর মেট্রোরেলে মিরপুর-১০ থেকে সময় লেগেছে মাত্র ২০ মিনিটের মত। তবে লম্বা লাইন থাকায় টেকেট পেতে ২০ মিনিটের মত অপেক্ষা করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, “বুয়েটের অধিকাংশ বিভাগে ক্লাশ শুরু হয় সকাল আটটায়। সকালের ক্লাস ধরতে ছয়টার দিকে বের হতে হয়। মেট্রোরেল এই কষ্টটা থেকে মুক্তি দিয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সাইন্স বিভাগের ১২ তম ব্যচের ২২ শিক্ষার্থী নিজেদের ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মত মেট্রোরেল চলাচল উদযাপন করতে জড়ো হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে।

তাদের একজন মাইনুল হাসান জিসান বলেন, “মেট্রোরেল ঢাকায় যোগাযোগের নতুন মাত্রা যোগ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এর সুফল পাবেন।”

তিনি বলেন, “যাতায়াতের ভোগান্তি কমে আসায় শিক্ষায় মনোযোগ বাড়বে। আবার পার্ট টাইম জব ও টিউশনিতে যুক্ত শিক্ষার্থীদেরও ভোগান্তি কমবে।”

গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশটি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

আর চলতি বছরের ৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের দ্বিতীয় ধাপের উদ্বোধন করেন।

উত্তরা-মতিঝিল রুটে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলাচল করে মেট্রোরেল। তবে শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের সুবিধার্থে উত্তরা নর্থ থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে এবং ৭টা ২০ মিনিটে দুটি ট্রেন চলাচল করে। কেবল এমআরটি পাস এবং র‍্যাপিড পাসধারীরাই এই ট্রেন দুটিতে যাতায়াতের সুবিধা পান।

সকাল সাড়ে ১১টার পর মতিঝিল-আগারগাঁও রুটে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকলেও উত্তরা-আগারগাঁও সেকশনে চলে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত।

২০১২ সালের জুলাইয়ে সরকার মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেয়। প্রাথমিকভাবে এটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের সময় ধরা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। তবে, পরবর্তীতে সময় বাড়ানো হয়।

Scroll to Top