চট্টলবীরের কবরে পড়েনি শ্রদ্ধার পুষ্প, আসেনি নেতাকর্মী-স্বজন

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টল বীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে সারা বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পাওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন আপোসহীন নেতা। চট্টগ্রামের স্বার্থে যে নেতা শেখ হাসিনার মতেরও বিরোধীতা করেছেন। সেই অবিসংবাদিত নেতার আজ (১৫ ডিসেম্বর) সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। এই দিনে নেতার চশমা হিল জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরটি থাকত ফুলে ফুলে ঢাকা। অথচ মৃত্যুর সাত বছর পর এইবারই প্রথম নেতার কবরস্থানে পিনপতন নিরবতা। তার কবরে হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিবর্গের ফুলের শ্রদ্ধা ছাড়া কোথাও যেন আর কেউ নেই! আর থাকবেই বা কোত্থেতে? এমন মৃত্যুবার্ষিকীতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবার বা সন্তানদেরই কেউ নেই, নেতাকর্মী তো দূরের কথা।

তবে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার দুই নম্বর গেইট মেয়র গলি চশমা হিল জামে মসজিদ কবরস্থানে ফজরের নামাযের পর খতমে কোরান, দোয়া মাহফিল ও কবর জেয়ারত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জোহরের নামাজের প্রাক্কালে চশমা হিল জামে মসজিদ কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনে পড়েছে হাতে গোনা দো-চারটি মাত্র ফুলের ডালা। একটিতে লেখা- মেয়র হজ্ব কাফেলা। ‘মেয়র হজ্ব কাফেলা’ চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন পরিচালনা করে থাকেন। একটি ফুলের ডালায় লেখা- সাবেক কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী এবং অন্যটিতে লেখা ‘নিষিদ্ধ’ ছাত্রলীগের মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সামদানি জনি। আরেকটি ছোট্ট ফুলের ডালায় লেখা রয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগ সহসভাপতি কামাল উদ্দিন। এই কামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগের একজন ত্যাগী, নিবেদিত কর্মী। চট্টগ্রাম মহানগর শ্রমিক লীগ বিভাজিত কমিটির একটিতে তিনি সহসভাপতি পদে আসীন।

তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, মহিউদ্দিন চৌধুরী শুধু আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না। উনাকে সর্বদলীয় নেতা বলতে পারেন। তিনি শ্রমিক লীগ থেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠেছিলেন। পরিস্থিতি ভাল থাকলে আজ এখানে হাজার হাজার নেতাকর্মীর মিলন মেলা বসতো। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্তরালে। কম বেশি সবাই মামলা হামলায় জর্জরিত। তাই ইচ্ছে থাকলেও আসতে পারছেন না তারা।

তবে নেতার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে এবারই প্রথম তার কবরে সন্তানরা জেয়ারত করতে পারেনি। তার বড় ছেলে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহীবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ছোট ছেলে বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন আত্মগোপনে। বাবার কবরে লাগেনি এই দুই সন্তানের হাতের ছোঁয়া। হয়নি কবরে জেয়ারত।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিন তিনবারের মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজানের গহিরা গ্রামে বক্স আলী চৌধুরী বাড়ির রেল কর্মকর্তা হোসেন আহমদ চৌধুরী এবং বেদুরা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে এসএসসি পাশ করেন। তার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের তিন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরী।

সিটি কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে ডিগ্রি পাশ করেন। আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং আইন কলেজে ভর্তি হলেও লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে উত্থান-পতন এবং নানা ঘটনাপ্রবাহে ‘চট্টলবীর’-এ পরিণত হয়েছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

চাটগাঁ নিউজ/ইউডি/এসএ

Scroll to Top