চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের ১০ হাজার ৭৯০ কোটি টাকার রাজস্ব আটকেছে মামলার জটে

সিপ্লাস ডেস্ক: চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের ১০ হাজার ৭৯০ কোটি টাকার রাজস্ব আটকে গেছে মামলার জটে। শুল্ক আপত্তির ২৯ হাজার ২৮২টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন থাকায় এই অর্থ আয় করা সম্ভব হচ্ছে না।

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ১৬ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। কিন্তু মামলার জটের কারণে এই অর্থের অর্ধেকেরও বেশি আটকে গেছে।

আমদানি জটিলতা কিংবা শুল্কায়নে বিরোধ সৃষ্টি হলেই কাস্টমসের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে আমদানিকারকদের। এই সুযোগে শুল্কায়নে কোনো সমস্যা হলেই আমদানিকারক ছুটছেন আদালতের দিকে। ফলে একদিকে যেমন বেড়েই চলেছে মামলার জট, তেমনি আটকে যাচ্ছে কাস্টমসের রাজস্ব।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে এম আকতার হোসেন বলেন, “মামলার কোনো চূড়ান্ত আদেশ বা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুল্কায়ন করা যায় না। যার কারণে রাজস্ব আদায় আটকে থাকে।”

অথচ ২০১২ সাল থেকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি-এডিআর পদ্ধতি চালু হলেও তা কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি। এই ১১ বছরে আমদানিকারক এবং কাস্টমসের যৌথ প্রচেষ্টায় মাত্র কয়েকশ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। যা আটকে পড়া রাজস্বের তুলনায় একেবারেই নগণ্য!

এ ক্ষেত্রে সরকারকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করার তাগিদ দিয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, “সরকারের এমন একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে হবে যাতে থাকবে, কেউ আদালতের দ্বারস্থ হলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ছাড়া তার আগের প্রক্রিয়া একটি কমিটির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে। তাহলে আমাদের অনেক সমস্যার দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনা থাকবে।”

এ অবস্থায় দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির মাধ্যমে আটকে পড়া রাজস্ব আদায়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপ কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, “আমরা একটি কমপ্লিট ডেটাবেইজ তৈরি করেছি, যার মাধ্যমে যে কোনো মামলার সর্বশেষ অবস্থা দেখতে পাই। তাছাড়া কোন মামলা কোথায় বা কত দিন যাবত পেন্ডিং আছে এবং কোনো মামলার রায় হলে, সেটি আমরা এই ডেটাবেইজে সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পাই। সে ক্ষেত্রে রায় সরকারের পক্ষে হলে রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম নেয়া হয় আর রায় সরকারের বিপক্ষে হলে দ্রুত উচ্চতর আদালতে আপিলের বিষয়ে ব্যবস্থা করা হয়।”

২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা পণ্য থেকে ৬১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা আদায় করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। এ দিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৬ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা।

এমনিতেই নানামুখি জটিলতায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। এর মাঝে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে আছে হাজার হাজার কোটি টাকা, আবার এই টাকার বিপরীতে পণ্য আটকে আছে চট্টগ্রাম বন্দরে। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে, এমনটা বলছেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

Scroll to Top