চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী বেশিরভাগই দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত

শেয়ার করুন

সিপ্লাস ডেস্ক: চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত। যারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অবস্থা দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি না হওয়ায় দেখা দিচ্ছে অন্যান্য সমস্যাও। এর মধ্যে চলতি বছরে আক্রান্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ডেঙ্গুর ডেন-২ ও ডেন-৩ ধরন বেশি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর অন্যান্য হাসপাতালে দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

ডাক্তারদের মতে, জ্বর হলেই ডেঙ্গু পরীক্ষা করে রিপোর্ট পজেটিভের পর দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। বিশেষ করে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি। তাদের প্রেসার কমে যাওয়া, বমি হওয়া, প্রস্রাব ও পায়খানা দিয়ে রক্ত যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।

এক সপ্তাহ আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা এলাকার শায়লা বেগম। গত জানুয়ারিতেও তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

তার ছোট ভাই আরাফাত বলেন, ‘প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্তের পর বাসায় চিকিৎসা করিয়েছিলাম। কিন্তু এবার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। আগেরবার এমন বমি হয়নি। এবার আমার আপু যা খায়, তাই বমি করে ফেলে। প্রস্রাব এবং পায়খানার রাস্তায় দিয়েও রক্ত যাচ্ছে। প্লাটিলেট কমে গেছে।’

সরেজমিন চট্টগ্রাম মেডিকেলে গেলে কথা হয় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দুই নারীর সঙ্গে। তারা আগেও একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু সেটা তারা জানতেন না। সেইবার ডেঙ্গু পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন। এখন আবারও তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।

১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কথা হয় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মঈন উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গতবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জ্বর ছিল, কিন্তু এবার জ্বর নেই। তবে এবার বমি ও পাতলা পায়খানা হয়েছে। আর শরীর এত দুর্বল হয়ে গিয়েছে, মাটিতে পা ফেলতে পারছি না।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল ঘুরে দেখা গেছে, ১৩, ১৪, ১৫ নম্বর মেডিসিন ওয়ার্ড এবং ৮ ও ৯ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে। প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের সঙ্গে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদেরও রাখা হয়েছে। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ডায়েরিয়া ও বমির ভাব থাকায় তাদের ওয়াশরুম ব্যবহারের ক্ষেত্রে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। তিন মেডিসিন ওয়ার্ডের ওয়াশরুমগুলো নোংরা-অপরিচ্ছন্ন। পর্যাপ্ত পানি নেই, কলের মুখ ভাঙা, দরজা ভাঙা।

এদিকে চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৯০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে আড়াই বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৬৫ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩৫৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চট্টগ্রামে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩০৩ জন।

জানা গেছে, ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে এবার বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে ‘ডেন-২’ ও ‘ডেন-৩’র। প্রথমবার ‘ডেন-১’ আক্রান্ত হয়ে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও সেটি ‘ডেন-২ বা ৩’ প্রতিরোধে কাজ করে না। আবার ‘ডেন-১’ সংবেদনশীল থাকাতে ‘ডেন-২’তে যদি আক্রান্ত হয় তাহলে সেটা তাকে প্রতিরোধ দেবে না, কিন্তু অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া করবে। অতিমাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি করতে গিয়ে এত প্রতিক্রিয়া হয় যে, রোগীর প্লাজমা লিকেজ হয় এবং শকে চলে যায়।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ জয় সিপ্লাসকে বলেন, ‘যখন ডেঙ্গুর একটি ধরন প্রথমবার শরীরে আক্রমণ করে তখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু দ্বিতীয়বার অন্য ধরন আক্রমণ করলে সেটা প্রতিরোধ করতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আক্রান্তদের অনেকেরই দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। তাদের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। অনেকের দুই-তিনদিনের মধ্যে প্রেসার কমে যাচ্ছে।’

Scroll to Top